জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে এসেছিলেন রহিমা বেগম

ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর রহিমা বেগমকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় আনা হয়। শনিবার দিনগত রাত ২টায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

নিখোঁজের ২৯ দিন পর উদ্ধার করা খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২) ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় অবস্থানকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

উপজেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে এসে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া এই নারী এ জন্য ইউপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বোয়ালমারী ইউপির চেয়ারম্যান মো. আবদুল হক।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটার দিকে রহিমা বেগম তাঁর কাছে আসেন। এ সময় রহিমা বেগম তাঁকে বলেন, তাঁর জন্ম ও শৈশব কেটেছে সৈয়দপুর গ্রামে। তবে পরবর্তী সময়ে ঘটনাচক্রে দীর্ঘদিন তাঁকে বাগেরহাট গিয়ে থাকতে হয়। সেখানে তিনি বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করতেন। এখন আবার জন্মভিটায় ফিরে এসেছেন। এসে দেখেন, তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। এ জন্য তাঁর জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ সময় আমি তাঁকে বলি, “আপনাকে চিনি না। আপনার বয়সও অনেক। আপনি যে এলাকার বাসিন্দা, সেই এলাকার ইউপি সদস্য যদি আপনাকে প্রত্যয়নপত্র দেন, তাহলে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া যাবে।” এ কথা শুনে রহিমা বেগম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর আসেননি।’

কুদ্দুস মোল্লার বাড়িটি ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান রহিমা বেগমের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসার বিষয়টি জানান এবং তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানান যে রহিমা বেগম এই এলাকার বাসিন্দা নন। তিনি কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কুদ্দুস মোল্লা যখন খুলনা ছিলেন, তখন রহিমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

আরও পড়ুন

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় তাঁর সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। নলকূপের পাশে তাঁদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তাঁরা খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। বিষয়টি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকেও জানানো হয়। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন সন্তানেরা।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি নিজের মায়ের বলে দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। ‘লাশ শনাক্তে’ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় যান। এ সময় মরিয়ম লাশটি তাঁর মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান। সেখানে লাশের পরিহিত কাপড় দেখেন। এরপর মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তাঁর মায়ের। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

আরও পড়ুন

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগর পুলিশের একটি দল কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে। কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে মোহাম্মদ জয়নাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, রহিমা বেগম ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু কী কারণে তিনি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন, তা জানি না।’

এদিকে গতকাল মোহাম্মদ জয়নাল বলেছিলেন, রহিমা তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি মৃত স্বামী মান্নানের কাছ থেকে দুই কাঠা জমি পেয়েছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা এই জমি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ছেলেমেয়েরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চান। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি রাগ করে চলে এসেছেন, আর বাড়ি ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথাও বলেছিলেন রহিমা।