হত্যার পর মাহফুজুরের লাশ রেললাইনে ফেলে রাখা হয়, দাবি পরিবারের

মাহফুজুর রহমানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মল্লিকা বেগম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর বাঘা উপচজেলার নওটিকা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ঈশ্বরদী যাওয়ার কথা বলে গত রোববার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন মাহফুজুর রহমান। এরপর বাড়িতে না ফেরায় অস্থির হয়ে মা মল্লিকা বেগম গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে ছেলের মুঠোফোনে কল করেন। অপর প্রান্ত থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহফুজুর রহমান বলছিলেন, ‘মা, আমাকে কোথায় যেন বেঁধে রেখেছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো।’

এটুকু বলার পর মা শুনতে পান, ওপাশ থেকে কেউ একজন বলছেন, ‘শালার হাত থেকে ফোন কেড়ে নে।’ এরপর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। আজ মঙ্গলবার সকালে খবর পান, বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের পাশে রেললাইনে ছেলের দ্বিখণ্ডিত লাশ পড়ে আছে। পরিবারের দাবি, হত্যা করে আলামত নষ্ট করার জন্য মাহফুজুর রহমানের লাশ রেললাইনের ওপরে ফেলে রাখা হয়।

নিহত মাহফুজুর রহমান (২৫) রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নওটিকা গ্রামের গাজিউর রহমানের ছেলে। উপজেলার পীরগাছা বাজারে জননী টেলিকম নামের একটি দোকান রয়েছে তাঁর। ছিলেন বিকাশ, নগদ ও ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট। তাঁর আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে আড়ানী রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে স্থানীয় লোকজন মাহফুজুর রহমানের শরীর থেকে মাথা বিছিন্ন লাশ দেখতে পান। এরপর পকেটে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে লোকজন বাড়িতে খবর দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১২টায় রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে নিচে কাটা পড়ে মাহফুজুর রহমানের দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার পুলিশ আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় মাহফুজুর রহমানের পকেট থেকে ট্রেনের একটি পুরোনো টিকিট, একটি স্মার্টফোন, একটি বাটন ফোন ও কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় লাশ নওটিকা গ্রামে নেওয়া হয়। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আগের দিন রাতে ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যেসব কথা হয়েছিল, সেগুলো আওড়ে মা মল্লিকা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

মল্লিকা বেগমের সঙ্গে গতকাল রাত ৮টার দিকে মাহফুজুরের কথা হওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি এই প্রতিবেদককে জানান পরিবারের সদস্যরা। এরপর গতকাল রাত ১১টার দিকে বিষয়টি রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে জানানো হয়। তারা কিছুক্ষণ পরই জানায়, রাত ১০টা ১৮ মিনিটে মাহফুজুর রহমানের অবস্থান ছিল রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে। সকালেই পুলিশ তাঁকে উদ্ধারের জন্য অভিযানে যেতে চেয়েছিল।

মাহফুজুর রহমানের চাচাতো ভাই বয়েজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর ভাইকে হত্যা করে আলামত নষ্ট করার জন্য লাশ রেললাইনের ওপরে ফেলে রাখা হয়েছিল। স্থানীয় কয়েকজন দোকানি তাঁকে জানিয়েছেন, ট্রেনের চালক ওই জায়গায় এসে বেশ কয়েকবার হুইসেল বাজিয়েছিলেন। সকালে লাশ দেখে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, চালক হয়তো লাইনের ওপরে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে ঘন ঘন হুইসেল বাজাচ্ছিলেন।

বয়েজুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ধারণা, টাকাপয়সা নিয়ে কারও সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের ঝামেলা হয়েছিল। টাকার জন্য কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান। টাকা না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। এর আগেও মাহফুজুরকে কারা যেন আটকে রেখে তিন দিন পর ছেড়ে দিয়েছিল।

জানতে চাইলে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক সফিক আল রাজী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে। তদন্ত করে ও ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত মিললে সেটা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।