চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, টানা শৈত্যপ্রবাহে নাকাল মানুষ

ঘন কুয়াশার কারণে শহরের রাস্তাঘাটগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সংযোগ সড়কের মাথাভাঙ্গা সেতুতে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এর মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায়। আজ শনিবার সকাল নয়টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের মধ্যে এটাই চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এর পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমে বাড়তে থাকে। ৩ জানুয়ারি তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। ৪ জানুয়ারি থেকে আবারও তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করে। ৫ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।

দুই দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে সূর্যের দেখা মিলছে না। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে। এতে সব মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

আজ সকাল নয়টায় শহরের বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে কথা হয় রিকশাচালক দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের আজিজুল হকের সঙ্গে। তাঁর পরনে পুরোনো পায়জামা আর জ্যাকেট। আজিজুল বলেন, ‘বাপু অ্যারাম জাড়ে (শীতে) মনডা বলে না রাস্তায় বেইর হই। সংসার চালাতি দুটো পয়সার জন্যি সেই পরভাতে (ভোরে) বাড়ি থেকে বাজারে আইচি। বাতাসে জীবনডা কাহিল।’
আজিজুল হকের কথায় সায় দিলে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানচালক শেল্টন সরদার, ‘য্যারাম কুয়ো (কুয়াশা), স্যারাম বাসাইত (বাতাস)। গাড়ি চালাইনো খুপ কষ্ট হচ্ছে।’

আলি হোসেন সুপারমার্কেটের সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখা গেল শীত উপেক্ষা করেই শ্রমিকহাটে হাজির হয়েছেন দিনমজুরেরা। সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কাথুলী গ্রাম থেকে বাইসাইকেল, ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রমিক আইজাল হক। আইজাল বলেন, ‘কাজের আশায় পেত্যেক দিন ১০ মাইল দূর থেইকে টাওনে (শহরে) আসি। গ্যালো চার দিন ধইরে কুনু কাজ না পাওয়ায় খালি হাতে ফিরে যাতি হচ্চে। অ্যারাম জাড়ের (শীত) মদ্যি সাইকেল চালিয়ে অ্যাদ্দুর আসা-যাওয়া যে কি কষ্টের, সেডা বুলে বুজাতি পারব না।’

হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসা এবং উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে মূলত শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ইতিমধ্যে জেলার শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩ হাজার কম্বল বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া আরও ৩০ হাজার কম্বল চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।