ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ঠেকানো যাচ্ছে না চুরি

এই নিচু সীমানাপ্রাচীর ডিঙিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে চোরেরা
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে জেনারেল হাসপাতালে গত এক বছরে অন্তত ২০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছয়টি চুরির ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বাকিগুলো ছোটখাটো চুরি বলে পুলিশকে জানানো হয়নি। একবার চোরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশেও দেওয়া হয়েছে। এরপরও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

হাসপাতালে বর্তমানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। এ কারণে চুরি ঠেকাতে চুক্তিভিত্তিক তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নেওয়ার কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা আরও বলেন, হাসপাতালে চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরাও। চুরি হচ্ছে হাসপাতালের বিদ্যুতের তামার তার, এসির তামার তার, লোহার পাইপ, এমনকি জানালার থাই গ্লাসও।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগারওয়ালা প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে মাসিক ২২ হাজার টাকার চুক্তিতে তিনজন নিরাপত্তাপ্রহরী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অচিরেই এটি কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে একজন প্রহরী দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং দুজন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

নিরাপত্তাপ্রহরীরা কাজ শুরু করলে চুরির প্রবণতা অনেক কমে যাবে বলে আশা করেন গণেশ কুমার। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের কোনো বাজেট নেই। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাঁদার টাকায় নিরাপত্তাপ্রহরীদের বেতন দেওয়া হবে।

ফরিদপুর পৌরসভার পাশে মুজিব সড়কের উত্তর দিকে অবস্থিত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯১৭ সালে। জেলায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও দূরত্বের কারণে শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই চিকিৎসাসেবা নিতে জেনারেল হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতালটিতে মোট তিনটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে মুজিব সড়কের পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রধান ফটক রয়েছে। আরেকটি প্রবেশপথ উত্তর-পশ্চিম কোণে হাসপাতালের মসজিদসংলগ্ন এলাকায়। হাসপাতালে যে সীমানাপ্রাচীর রয়েছে, এর উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট। ফলে হাসপাতালের ফটকের বাইরে, বিশেষত ফরিদপুর পৌরসভা ও জেনারেল হাসপাতালের মধ্যের অংশটুকু সড়কের পাশে হওয়ায় অবাধে সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। চোরদের আসা-যাওয়ার পথও মূলত এই অংশ।

হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বেলা তিনটা থেকে সাড়ে বিকেল চারটা এবং রাত একটা থেকে তিনটার মধ্যে চুরির ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময়সীমার মধ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের টাকা, মুঠোফোনসহ মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০টি। চোরদের মূল নজর পেয়িং বেডে থাকা রোগীরা। তাঁদের আর্থিকভাবে বেশি সচ্ছল ভাবে চোরেরা।

হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) মো. শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ধারণা, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। এরা সুযোগসন্ধানী। নেশা পেলে সুযোগ বুঝে একটা ভাঙা বেঞ্চের পায়াও নিয়ে যায়।’

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে ওই হাসপাতালে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় পুলিশ। চোরও ধরা পড়ে। কিন্তু হাসপাতালের কেউ বাদী হতে আগ্রহী হন না। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হলে আদালত প্রশ্ন করেন, চুরির মামলার পুলিশ বাদী কেন। ফলে মামলাগুলো হালকা হয়ে যায়। আসামিও জামিনে বের হয়ে যান। তাই আমাদের করার কিছু থাকে না।’

হাসপাতালে একের পর এক চুরির বিষয়টি ৮ জানুয়ারি জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান। পুলিশ সুপারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তিনি।

ছিদ্দীকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে এ জেলার সিভিল সার্জন ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমি কখনো শুনিনি পুলিশ আমাদের বাদী হতে বলেছে। বাদী হতে বললে আমরা হব না কেন? তারা তো (পুলিশ) বলে, বড় বড় মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে যায়, আর এ তো সামান্য চুরির মামলা।’