কক্সবাজারের এক ইউনিয়নে ১৪ লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি

কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের গোলাপ বাগান
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে চকরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন বরইতলী। একসময় গ্রামজুড়ে বরই চাষ হতো, এখন পুরো বরইতলীজুড়ে গোলাপের চাষ। এ কারণে ইউনিয়নটি গোলাপগ্রাম নামে পরিচিতি পায়।

ইউনিয়নে আছে ছোট–বড় ১০৩টি বাগান। আজ মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বিক্রি হবে ১ লাখ ২৫ হাজার গোলাপ। বাগানে প্রতি ১০০ গোলাপের পাইকারি মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি গোলাপের দাম পড়ে ১১ টাকা। ভালোবাসা দিবসে খুচরায় প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। চাষিদের ভাষ্য, আজ ভালোবাসা দিবসে বরইতলী ইউনিয়নেই বিক্রি হবে প্রায় ১৪ লাখ টাকার সোয়া ১ লাখ গোলাপ। সকাল সাতটা থেকে বাগানে গোলাপ বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল নাগাদ। জেলা, উপজেলার শতাধিক ফুলের দোকান ছাড়াও স্কুল–কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীরাই গোলাপের মূল গ্রাহক।

সকালে বরইতলীর একটি বাগানে গোলাপ কিনতে আসেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। বাগানে এসে গোলাপ কেনার কারণ তুলে ধরে নজরুল নামের এক তরুণ বলেন, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে ভালোবাসা জমে না। প্রকৃত ভালোবাসার জন্য গাছের গোলাপ প্রয়োজন। আরেক তরুণ বলেন, দূরের মানুষকে কাছে টানার সহজ উপায় হলো গোলাপ ফুল।

কয়েকজন বাগান মালিক বলেন, গত বছর এই সময় গাছের গোলাপ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ দুই টাকায়। এবার বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে খুচরায় প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। চড়া মূল্যে গোলাপ বেচাবিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বরইতলীর ১০৫ একর জমিতে ছোট বড় ১০৩টি গোলাপের বাগান আছে। প্রতিদিন এসব বাগান থেকে ১ থেকে ২ লাখ গোলাপ কাটা হচ্ছে। ৯০ শতাংশ গোলাপ সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরের চেরাগী পাহাড়ের ফুলের দোকানগুলোয়। অবশিষ্ট গোলাপ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়।

করোনা মহামারির সময় গোলাপ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন সবাই লাভবান জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কক্সবাজার জেলায় গোলাপের চাহিদা তিন লাখ। অর্ধেক চাহিদা পূরণ হচ্ছে বরইতলীর গোলাপ বাগান থেকেই।

কক্সবাজার শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরের বরইতলী গ্রামের বাগান থেকে সকালে কয়েক হাজার গোলাপ কিনে আনেন শহরের ফুল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর। ফুলগুলো বেচাবিক্রি হচ্ছে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন দোকানে। তরুণ-তরুণীরা তাঁর দোকান থেকে গোলাপ কিনছেন একেকটা ১৫ থেকে ২০ টাকা দামে। আলমগীর বলেন, বরইতলীতে প্রতিটা গোলাপ কিনতে হয়েছে ১১ টাকায়। পরিবহন ও রক্ষাণাবেক্ষণের বিপরীতে খরচ যোগ করলে প্রতিটা ফুলের দাম পড়ে ১৩ টাকা। দুই-তিন টাকা লাভে গোলাপ বিক্রি করছেন তিনি।

বরইতলীর লামারপাড়ায় ৪০ শতাংশ জমিতে গোলাপ বাগান করেন স্থানীয় চাষি নাছির উদ্দিন। বাগানে গাছ আছে ৪ হাজার ৬০০টি। প্রতিটি গাছে ফুটেছে ২ থেকে ৫টি করে। তিনি বলেন, গতকাল বাগান থেকে তিনি ১ হাজার ২০০ গোলাপ বিক্রি করেন। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বিক্রির জন্য গাছ থেকে কেটেছেন ১ হাজার ৩০০টি গোলাপ। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করছেন ১১ টাকায়।

গোলাপ চাষিদের সংগঠন ‘বরইতলী গোলাপ বাগান মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বরইতলির শতাধিক বাগান থেকে কাটা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজারের মতো গোলাপ। আগের দিন গতকাল সোমবার কাটা হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজারের মতো গোলাপ। সব গোলাপই বিক্রি হয়েছে। গত বছর ভালোবাসা দিবসে বাগান থেকে গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ৭১ হাজার। তখন প্রতিটা গোলাপ বিক্রি হয়েছিল মাত্র ২ টাকায়। করোনা মহামারির দুই বছর গাছের গোলাপ গাছেই নষ্ট হয়েছিল, কেনার লোক ছিল না।