স্মৃতি রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ

চার শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতি রক্ষায় তাঁদের পরিবার পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন।

বগুড়া শহরের পিটিআই মোড়-বকশীবাজার সড়কে খাদ্য ভবনসংলগ্ন গলির একটি বাড়ির নাম ‘চিশতী আস্তানা’। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে আলবদর বাহিনী এই টিনশেডের বাড়িটি পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল। এ বাড়িতে থাকত শহীদ সাংবাদিক চিশতী হেলালুর রহমানের পরিবার। তাঁর লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে পরিবারের লোকজন শহরের একটি সড়ক নামকরণ করার জন্য এক যুগ আগে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শুধু চিশতী হেলালুর রহমান নন, বগুড়ার আরও তিন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতি রক্ষায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হল (এখন সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) থেকে আটক করে দৈনিক আজাদ পত্রিকার ওই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চিশতী শাহ হেলালুর রহমানকে। হেলালুর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতিও ছিলেন। হেলালুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশায়। পরিবারের পক্ষ থেকে পিটিআই মোড় থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ সাংবাদিক চিশতী হেলালুর রহমানের নামে করার জন্য এক যুগ আগে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পৌরসভা থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

চিশতী হেলালুর রহমানের ছোট ভাই রেজানুর রহমান বলেন, বগুড়ায় তাঁর স্মৃতি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই। এটা তাঁদের ব্যথিত করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী মহসীন আলী দেওয়ান শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বগুড়ার শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। থাকতেন বগুড়া শহরে। তিনি বগুড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বগুড়া শহর দখলে নিলে তিনি তাঁর শ্বশুরবাড়ি আদমদীঘি উপজেলাতে আশ্রয় নেন। কিছুদিন পর থেকে কলেজের উপাধ্যক্ষ তাঁকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাপ দিতে থাকেন। ৩ জুন উপাধ্যক্ষের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গেলে তাঁকে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়। এরপর কোথাও তাঁর খোঁজ মেলেনি।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, জেলা শহরের সেউজগাড়ি এলাকায় কয়েক বছর আগে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ মহসীন আলী দেওয়ান সড়ক নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হলেও তা পৌরসভার নথিতে উল্লেখ করা নেই।

কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগম ও গীতিকার জেব-উন-নেসা জামালের বাবা কছিরউদ্দিন তালুকদার ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার অভিযোগে ১৯৭১ সালের ২৯ মে কছিরউদ্দিনকে তুলে নিয়ে গিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর নামানুসারে বগুড়া শহরের ১ নম্বর রেলগেট থেকে বাদুরতলা তিব্বতের মোড় পর্যন্ত শহীদ ডা. কছিরউদ্দিন সড়ক নামকরণ করা হয়। সড়কটি এখনো চকযাদু রোড নামে পরিচিত।

বগুড়ার খ্যাতনামা আইনজীবী ছিলেন শহীদ আবদুল জব্বার। তিনি বসবাস করতেন জেলা শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায়। আবদুল জব্বারের ছোট ছেলে শাফিয়ী বিল্লাহ জব্বার বলেন, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাবা বগুড়া শহর ছেড়ে পৈতৃক বাড়ি জয়পুরহাটের মল্লিকপুর গ্রামে চলে যান। ১৬ মে সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁর বাবাকে দড়ি দিয়ে জিপের সঙ্গে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

শাফিয়ী বিল্লাহ জব্বার আক্ষেপ করে বলেন, কালীবাড়ী মোড় থেকে ইয়াকুবিয়া মোড় পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয় শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক নামে। কিন্তু পরে সে নাম বদলে ফেলা হয়।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি রক্ষায় বগুড়া পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।