রাজশাহীতে ১৮টি কম্বল নিয়ে মারামারি করে বিএনপির ১৩ জন আহত

রাজশাহীর পুঠিয়ায় কম্বল নিয়ে মারামারিতে আহত উপজেলার ধোপাপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আনসার আলী ও তাঁর ছেলে সৌমিক হাসান। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ১৮টি কম্বল নিয়ে মারামারিতে বিএনপির অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার ধোপাপাড়া বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আহত অবস্থায় বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আনসার আলী (৫৪), তাঁর ছেলে সৌমিক হাসান (২৪), দেলোয়ার হাসান (২৫) ও সাব্বির হাসান (১৪)। আনসার আলীর স্ত্রী শামীমা বেগমও (৪৫) আহত হয়েছেন। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন দুই সহোদর বাবু ও আনোয়ার এবং আকরাম ও হান্নান, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন, এমরান আলী, শামীম হোসেন ও ওয়ার্ড কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক রনি ইসলাম।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনসার আলী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ১৮টি সরকারি কম্বল বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ বেগম। তিনি তাঁকে ফোন করে পাঁচ থেকে ছয়জন শীতার্ত মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তিনি গিয়ে দেখেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরজ আলী একাই সব কম্বল নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোপাপাড়া বাজারে তাঁর (আনসার আলী মার্কেট) মার্কেটে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আরজ আলী ও তাঁর লোকজন তাঁদের (আনসার আলী) ওপরে হামলা চালায়। এতে তাঁরা আহত হন।

ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ বেগম বলেন, এখন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বার নেই। তাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্যের দায়িত্ব তাঁদের পালন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তিনি শিক্ষকতা করেন। এলাকায় কারা গরিব মানুষ তাঁর পক্ষে তো জানা সম্ভব না। তাই স্থানীয়ভাবে যাঁরা নেতৃত্ব দেন, তাঁদের সহযোগিতা নেন। এখানে ধোপাপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরজ আলী সরাসরি তাঁর ছাত্র। ধোপাপাড়া ওয়ার্ডে ৯টি পাড়া আছে। প্রত্যেক পাড়ায় দুটি করে কম্বল দেওয়ার জন্য তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আনতে বলেছিলেন। ফটোকপিতে তিনি স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। সেগুলো জমা দিয়ে আরজ ১৮টি কম্বল নিয়ে এসে গ্রামে বিতরণ করেছেন।

ফারুকনাজ বেগম বলেন, ‘আনসার আলী তাঁর কাছে এসে বলছিলেন, “শুধু আরজকে দিলেই হবে না, তাঁদেরও দিতে হবে।” বিষয়টি তিনি আরজকে জানিয়ে বলেন, ‘সবাই মিলেমিশে কম্বলগুলো ভাগ করে দিতে হবে।’ সে বলেছিল, ‘কোনো সমস্যা হবে না।’ এটা গত রোববারের ঘটনা। হঠাৎ সোমবার দুপুরে এ নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে।’

এ সম্পর্কে আরজ আলী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ধোপাপাড়া ওয়ার্ডে ৯টি পাড়ায় ৯ জন সমন্বয়ক আছেন। তিনি ১৮টি কম্বল ভাগ করে দুটি করে ৯ জনের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরপর সোমবার সকালে তিনি ধোপপাড়া বাজারে চা খেতে যান। সেখানে কম্বল বিতরণ নিয়ে কথা ওঠে। ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ তাঁকে ফোন করে জানান, আনসার আলী তাঁর কাছে কম্বল পাঠাতে বলছেন, তিনি বিতরণ করবেন। আরজ প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দেন, তিনি সভাপতি, তিনি বিষয়টি দেখবেন। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন এসে বলেন, ‘তুই কিসের সভাপতি।’ এই বলে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আনসার আলীর দুই ছেলে তাঁকে কিলঘুষি মারেন। তাঁর লোকজন সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে আসেন। পরে আরজের অনুসারীরা খবর পেয়ে সেখানে গেলে তাঁদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাঁর অনুসারী ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন, এমরান আলী, শামীম হোসেন ও ওয়ার্ড কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক রনি ইসলাম আহত হন। তাঁরা হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি শান্ত আছে। তখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করতে আসেনি।