যেভাবে ছড়িয়ে গেল দ্রোহের আগুন

শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ ঘোষণার পর আনন্দ উদ্‌যাপন করতে হাজারো মানুষ মিলিত হয় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায়। গত ৫ আগস্ট তোলাছবি: দিনার মাহমুদ

পুলিশের হাতে ছিল অস্ত্র। আর পুলিশের সঙ্গে নানা অস্ত্র হাতে ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরাও। তাদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শহরের স্কুল, কলেজপড়ুয়া কিশোর–কিশোরীরা। তাদের কারও হাতে ছিল ইটপাটকেল, কারও হাতে জাতীয় পতাকা বাঁধা বাঁশের লাঠি। অগ্নিঝরা কণ্ঠে তারা স্লোগান দেয় ‘বুকের ভেতর ভীষণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’।

কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন শহরে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে রণক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে আসে একটি অ্যাম্বুলেন্স। ইটপাটকেল হাতে মারণাস্ত্রের সামনে দাঁড়ানো কিছু কিশোর ভুলে যায় তাদের দিকে তাক করে থাকা অস্ত্রের কথা। কিশোরেরা অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে দৌড়ে এগিয়ে যায়। জাতীয় পতাকা বাঁধা বাঁশের লাঠি হাতে চিৎকার করে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানোর পথ করে দেয়।

১৮ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বর এলাকার এই দৃশ্য যেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেরই প্রতীক। ভয়ংকর সব মারণাস্ত্রের সামনে বুক পেতে দিয়ে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের এই লড়াইয়ে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-জনতাও অংশ নেন। আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এবং ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ। শহীদ হন অন্তত ৫৪ জন ছাত্র–জনতা। আহত হন হাজারের বেশি মানুষ। নারায়ণগঞ্জে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি নিয়ে সাজানো হয়েছে অভ্যুত্থানের দিনলিপি।

১৪ জুলাই, রোববার
বেলা ১১টার দিকে চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রদলের দুজন নেতা ও চারজন সাধারণ শিক্ষার্থী।
শহীদ মিনারের বেদিতে বসে প্ল্যাকার্ডে স্লোগান লেখেন তাঁরা। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে ২৫-৩০ জনের মিছিল শহর ঘোরে। সেই মিছিল ফের শহীদ মিনারে এলে নারায়ণগঞ্জ কলেজের একদল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সংহতি জানায়।

সেদিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে প্রথম দিনের আন্দোলন শেষ হয়। পরদিন একই স্থানে সমাবেশের ঘোষণা দেন ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক। নারায়ণগঞ্জে সূচনা হয় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার হলেও শুরুতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বেই আন্দোলনে অংশ নিই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটলে এর প্রতিবাদে শহরে মশালমিছিল বের করেন নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় চাষাঢ়ায় তোলা
ছবি: দিনার মাহমুদ

১৫ জুলাই, সোমবার
আগের দিনের মতোই শহীদ মিনারের বেদিতে প্ল্যাকার্ড লেখেন ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী। দুপুর সাড়ে ১২টার পর তাঁরা বঙ্গবন্ধু সড়ক ও সিরাজউদ্দৌলা সড়কে মিছিল করেন। মিছিলটি চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বরে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

আন্দোলনকারীদের নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’। সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর থেকে শহরের কলেজ রোড, সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ও রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রসহ মহড়া দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে এদিন শহরে মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি সরকারি তোলারাম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন।

সেদিনের স্মৃতিচারণা করে জেলা ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আগে থেকেই মশাল বানানো ছিল। হামলার পর অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা তাৎক্ষণিক মিছিলের সিদ্ধান্ত নিই। এই মিছিলের পরেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে।’

১৬ জুলাই, মঙ্গলবার
প্রথম দুই দিন নারায়ণগঞ্জে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও এদিন শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন। চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হামলার আশঙ্কা তৈরি হলে চার শতাধিক শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। শহরে মিছিলের পর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক বরাবর বিভিন্ন দাবিসংবলিত স্মারকলিপি জমা দেন। সেদিন সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁদের ওপর হামলা চালান।

আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, রাফি, আদনান হত্যার প্রতি নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। গত ১৭ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

১৭ জুলাই, বুধবার
দিনটি ছিল দশই মহররম। একদিকে কারবালায় ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শহরে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি। এদিকে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র–জনতার মনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদসহ শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের শোক। ঐতিহাসিক এই দিনটিতে প্রতিবাদের এক নজির তৈরি করেন নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিল্পী অমল আকাশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাজিয়া মিছিলের আদলে ‘মাতম মিছিল’ করেন। বুকে ও পিঠে আন্দোলনে শহীদদের নাম লিখে বুক চাপড়ে করা এই মাতম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শহর অবরুদ্ধ রাখেন। শহরে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। আন্দোলনে শহীদ শিক্ষার্থীদের জন্য চাষাঢ়ায় গায়েবানা জানাজা হয়। লেখক ও শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বই পুড়িয়ে তাঁর একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। জালকুড়ি, ভুঁইগড় ও শিমরাইলেও শিক্ষার্থীদের মিছিল হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক দখলের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলাজুড়ে ছিল পুলিশের কড়া মহড়া।

১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
আন্দোলনে উত্তাল শহর। কিশোর–তরুণদের হাতে প্ল্যাকার্ড, বুকে–মাথায় জাতীয় পতাকা। সকাল ১০টার আগেই বিভিন্ন সড়ক শিক্ষার্থীদের দখলে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। শহরে নামানো হয় জলকামানসহ সাঁজোয়া যান। বেলা ১১টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় গিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। তাঁরা কেন্দ্রঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচি পালনে শহরে মাইকিং করেন। একই সময়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বর অবরোধ করেন। লিংক রোড ও সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মোগরাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এদিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, বামজোট ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদেরও আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হন। সেখানে থাকা পুলিশের একটি জলকামান চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন।

দুপুর সোয়া ১২টা নাগাদ সাঁজোয়া যানগুলো সেখান থেকে চলে গেলেও একটি পুলিশ ভ্যানে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ এড়াতে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা মিছিল নিয়ে চাষাঢ়া ছাড়ার চেষ্টা করলে বঙ্গবন্ধু সড়কে মিছিলের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহর। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জেও। সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ যোগ দেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘একটা একটা রাজাকার ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। ত্রিমুখী এই সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারী আহত হন। হামলার শিকার হন আলোকচিত্রী মনিরুল ইসলাম।
শেষ বিকেলে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ২ নম্বর রেলগেট এলাকার পুলিশ বক্স, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দেওভোগে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও চাষাঢ়ায় পুলিশের একটি গাড়ি পোড়ান।

বেলা সাড়ে তিনটায় সারা দেশে আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শহরে সমাবেশ করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এ সময় সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বিসহ সংস্কৃতিকর্মীরা সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
রাতে সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এদিন নারায়ণগঞ্জে অন্তত দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

১৯ জুলাই, শুক্রবার
সকালে সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। এসব এলাকায় দিনভর থেমে থেমে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। ফতুল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় শামীম ওমানের কার্যালয় হিসেবে পরিচিত নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে আগুন দেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে একই সড়কের জালকুড়ি এলাকায় শামীম ওসমানের মালিকানাধান শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ডিপোতে আগুন দেওয়া হয়।

বেলা দুইটার দিকে গাড়িবহর নিয়ে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে মহড়া দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। জুমার নামাজের পর ডিআইটি এলাকার থেকে মুসল্লি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরে মিছিল বের করেন। মিছিলটি নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এলাকায় গেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভেতর থাকা শামীম ওসমানের অস্ত্রধারী অনুসারীরা মিছিলে হামলা চালান ও মিছিলের পেছনে ছররা গুলি ছোড়েন। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, শ্যালক তানভীর আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নিয়াজুল ইসলাম আগ্নেয়াস্ত্র হাতে শহরে মহড়া দেন এবং আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। অস্ত্রধারীরা ডিআইটি এলাকায় গুলি ছোড়ার সময় পাশের একটি এলাকার ছাদে থাকা ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।

দিনভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের পর বিকেলে পুলিশও আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় ছবি বা ভিডিও করতে গণমাধ্যমকর্মীদের বাধা দেন শামীম ওসমানের অনুসারী সাংবাদিকেরা। ঘটনার ভিডিও করতে গেলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন স্থানীয় একটি অনলাইনের সম্পাদক ফখরুল ইসলাম।

সন্ধ্যা পর্যন্ত ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা পিছু হটেন। তাঁরা সদর থানা রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এ সময় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও নগর ভবনে আগুন দেওয়া হয়। এই দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়।


২০ জুলাই, শনিবার
সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থাকে আন্দোলনকারীদের দখলে। আগের রাতে সারা দেশে কারফিউ জারির পর মধ্যরাতের পর থেকেই এই মহাসড়কের ওপর দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়। প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। শহরেও সেনাসদস্যরা টহল দেন। বিকেলে শিমরাইলে ঘটে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড। এদিন নারায়ণগঞ্জের অন্তত ২০ জন নিহত হন।

সেদিন সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে আন্দোলনে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সেদিনের অবস্থা ভয়ংকর ছিল। এটা ছিল সিনেমায় দেখা যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো। যৌথ বাহিনীর মুহুর্মুহু গুলির কারণে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার গলিতে অবস্থান নেন। আকাশে উড়তে থাকা হেলিকপ্টার এলাকাগুলোর ভেতরেও সাউন্ড গ্রেনেড আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। অনেকেই তখন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। সন্ধ্যায় শিমরাইল এলাকায় হাজী ইব্রাহিম শপিং কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। আটতলা এই বাণিজ্যিক ভবনে একটি বেসরকারি ব্যাংক, বেসরকারি একটি হাসপাতাল ও হাইওয়ে পুলিশের ক্যাম্প ছিল।

মূলত পুলিশ ক্যাম্প থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর পর ভবনটিতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ক্যাম্পে থাকা পুলিশ সদস্য ও বাসিন্দারা ভবনটিতে আটকা পড়লে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের আগে ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া হয়। শতাধিক ব্যক্তি এতে হতাহত হন। তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় বাসিন্দা, যাঁরা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

বিকেলে শিমরাইলের একটি ছয়তলা ভবনের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার। একটি গুলি তাঁদের ফ্ল্যাটের বারান্দার স্টিলের গ্রিল ভেদ করে আড়াই মাসের প্রসূতি সুমাইয়ার মাথায় লাগে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ-সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রিজন ভ্যানে কারাগারে নেওয়ার সময় কথা বলার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা। গত ৩১ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

২১ জুলাই, রোববার
সকালে জালকুড়ি, ভুঁইগড়, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক এলাকায় ছিল আন্দোলনকারীদের অবস্থান। বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা। পরে বেলা একটার দিকে ফের শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান।

সরেজমিনে দেখা যায়, জালকুড়ি থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগোতে থাকে যৌথ বাহিনী। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। যৌথ বাহিনী এই প্রক্রিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর ফাঁকা হয় মহাসড়ক। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যানসহ অন্তত ২২টি যানবাহন পোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সরকারের পক্ষে একপেশে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে এই দিন রাতে একযোগে শহরের বিভিন্ন স্থানের ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আন্দোলনকারীরা।

২২ জুলাই, সোমবার
সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখা যায়। দুপুরে কারফিউ শিথিল করা হলে এই মহাসড়কে টানা পাঁচ দিন পর যান চলাচল শুরু হয়। শহরেও লোকজনের চলাচল বাড়তে থাকে। আন্দোলন দমে আসার সঙ্গে বাড়তে থাকে বিভিন্ন থানায় মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা। বিশেষত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন ভোররাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদেরকে না পেয়ে বাসা থেকে তাঁর ১৭ বছর বয়সী ভাই আবু রায়হানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা জানান, সহিংসতার ঘটনায় ১৮ জুলাইয়ের পর জেলার পাঁচটি থানায় নয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৫৪৩ জনকে এজাহারনামীয় এবং ৪৯০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৯০ জনকে।

২৩ জুলাই, মঙ্গলবার
বন্দর, পঞ্চবটী ও জালকুড়ি এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শহরে লোকজনের চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। যান চলাচল ছিল। শহর ও শহরের বাইরে সতর্ক পাহারার পাশপাশি যৌথ বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান চলছিল।

২৪ জুলাই, বুধবার
সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় ১৯ জুলাই দুপুরে বাসার ছাদে খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া ৬ বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপ।

১৮ জুলাই বন্ধ হওয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয় ২৪ জুলাই। এদিন বিভিন্ন পোশাক কারখানা খোলা হয়। সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিথিল করা হয় কারফিউ। ওই দিন বিকেএমইএর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, টানা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ছয় দিনে তাঁরা প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্রয়াদেশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সেদিন রাতে শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের বাস পোড়ানোর অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা ফারহানা মানিক, সংস্কৃতিকর্মী ভবানী শংকর রায় ও অমল আকাশকে আসামি করা হয়।

২৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার
সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে আরও পাঁচটি মামলা হয়। মামলাগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আন্দোলনে জড়িত সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি থেকে নিরাপদে সরে যান কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৪৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

২৬ জুলাই, শুক্রবার
এলাকায় এলাকায় আন্দোলনকারীদের খোঁজে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের জন্য শুক্রবারেও বসে বিশেষ আদালত। আদালত চত্বরে ছিল গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্র-জনতার স্বজনদের আহাজারি।

২৭ জুলাই, শনিবার
সকালে নারায়ণগঞ্জে আসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট, পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না জানতে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

২৮ জুলাই, রোববার
গ্রেপ্তারকৃতদের খোঁজে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে দিনভর অপেক্ষা করেন স্বজনেরা। কেউ কেউ গ্রেপ্তার স্বজনদের মুক্তির জন্য আদালত চত্বরে চিৎকার করেন। সপ্তাহজুড়ে অন্তত ২৭টি মামলায় পাঁচ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তারের ফলে সেদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে আদালত চত্বর।

আইনজীবীরা অভিযোগ করে বলেন, আদালত পুলিশের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক মামলাগুলোর নথিপত্র আইনজীবীদের সরবরাহ করছেন না। এমনকি মামলার এজাহার পর্যন্ত আইনজীবীদের দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ‘কেস স্টাডি’ ছাড়াই জামিন শুনানিতে অংশ নিতে হচ্ছে তাঁদের। এ বিষয়ে অন্তত ১০ জন আইনজীবীর একটি দল দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা করে প্রতিকার চান। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও ৯ দফার দাবিতে জালকুড়ি ও আদালত এলাকায় প্রতিবাদী দেয়াললিখন করেন শিক্ষার্থীরা।

২৯ জুলাই, সোমবার
নারায়ণগঞ্জে নাশকতার অভিযোগে আরও দুটি মামলা হয়। এ নিয়ে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯। সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬৩ জনে।

৩০ জুলাই, মঙ্গলবার
সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করার অভিযোগে রূপগঞ্জে তাওহিদুল ইসলাম জিসান (২১) নামের এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেন যুবলীগের নেতা–কর্মীরা। এদিন বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় দেয়াললিখন করেন শিক্ষার্থীরা।

৩১ জুলাই, বুধবার
পাঁচটি থানায় অন্তত ৩০টি মামলায় কিশোর–তরুণসহ মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০২ জনে।  এদিন শহরের ভোলাইল ও চাষাঢ়ায় দেয়াললিখন করেন শিক্ষার্থীরা।

১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার
আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে সন্ধ্যায় চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ‘মোমশিখা প্রজ্বালন’ কর্মসূচি দেন নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবকেরা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের শহীদ মিনার থেকে বের করে তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও তোলারাম কলেজের স্নাতক শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান, মুন্নি আক্তার ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী অনামিকা চৌধুরী হাতে হাত চেপে সড়কে দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান এবং পুলিশের লাঠিপেটার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ ঘটনার ভিডিও তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের কেন্দ্র করে সেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থী ও আভিভাবকেরা জড়ো হন। সেখান থেকে পুলিশ তিনজন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এক দফা দাবি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট প্রতিবাদী গানের আয়োজন করে। গত ৩ আগস্ট দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

২ আগস্ট, শুক্রবার
১৩ জনকে সমন্বয়ক ও ৩৬ জনকে সহসমন্বয়ক করে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সদ্যঘোষিত কমিটির নেতারা পরদিন চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বরে ফের জমায়েতের ঘোষণা দেন। কমিটির একজন সমন্বয়ক ফারহানা মানিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘২২ জুলাইয়ের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনে ভাটা পড়ে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় তখন ঝটিকা মিছিল ও দেয়াললিখন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তখন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই অনলাইনে সভা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সংগঠকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ফেলি। সেই কমিটি পরদিন একযোগে চাষাঢ়ায় অবস্থানের ঘোষণা দেয়।’

৩ আগস্ট, শনিবার
দীর্ঘ ১২ দিন পর আবারও ছাত্র–জনতার দখলে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ। সেদিন সকালে লিংক রোড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনরত ছাত্র–জনতা শহর দখলে রাখেন। তাঁরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে স্লোগান দেন।

বিকেলে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ‘গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার’–এর প্রতিবাদে ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতিবাদী গান ও কবিতা পাঠ করা হয়। সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি আন্দোলনে হওয়া হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনার সরকারেরও পদত্যাগের দাবি জানান।

দুপুর ১২টার দিকে বিজিবি সদস্যদের বহন করা কয়েকটি গাড়ি শহরে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শহর ত্যাগ করে। এতে উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এদিন নারায়ণগঞ্জে ছাত্র সমন্বয়কদের নাম ঘোষণার পর ছাত্রনেতা ফারহানা মানিকের বাড়িঘরে অভিযান চালায় পুলিশ।

৪ আগস্ট, রোববার
সারা দেশে ‘অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইলসহ কয়েকটি এলাকা দখলে নেন। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে মাঠে নামেন ছাত্র–জনতা। বেলা ১১টার পর জেলার বিভিন্ন কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন। দুপুর ১২টার মধ্যে পুরো জেলা ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায়। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।

হামলা হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। কার্যালয়ের সামনে ডিসি থিম পার্কে আগুন দেওয়া হলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। বেলা তিনটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতা হয়। আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশ্বাসে এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা দুহাত তুলে হাঁটু গেড়ে সড়কের ওপর বসে পড়েন। ঠিক তখনই সমঝোতা ভেঙে কয়েক গজ দূর থেকে সড়কে বসে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে পুলিশ। এতে দুই শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন।

সরেজমিনে মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, মৌচাক শিমরাইল মোড়ে ও যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান দেখা যায়। লাঠিসোটা হাতে তাঁরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে স্লোগান দেন। এদিন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত চারজন নিহত হন।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাঁনমারী এলাকায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। গত ৪ আগস্ট তোলা
ছবি: প্রথম আলো

৫ আগস্ট, সোমবার
আগের দিন কেন্দ্রীয়ভাবে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা হয়। সকালে খণ্ড খণ্ড হয়ে ঢাকার উদ্দেশে পথে নামে ছাত্র-জনতা। সকালে সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকায় যাওয়ার পথে অনেককেই ফিরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। ঢাকামুখী ছাত্র–জনতা তখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়ক হয়ে রাজধানীতে পৌঁছায়। কেউ কেউ বেছে নেন ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সড়ক ও নদীপথ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বরে কয়েক শ ছাত্র-জনতা জড়ো হলে শামীম ওসমানের অনুসারী যুবলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল হোসেন ও শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের অনুসারী অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর গুলি চালান। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। মারা যান আবুল হাসান নামে বন্দরের কুশিয়ারার এক যুবক।

দুপুরের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে শহর ও শহরতলিতে মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। কারও কারও চোখে দেখা যায় আনন্দাশ্রু। হাজারো নারী–পুরুষ, ছাত্র–জনতা জাতীয় পতাকা হাতে সড়কে নেমে এসে উল্লাসে মাতেন। তাঁরা রং ছিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে আনন্দ করেন। কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণ করেন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা বীর নারায়ণগঞ্জবাসী পান মুক্তির স্বাদ।

‘যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে’
চারতলা বাসার ছাদে বসে খেলাধুলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ। আড়াই মাসের সন্তানকে বিছানায় শুইয়ে রেখে ছয়তলা ভবনের জানালায় দাঁড়ানো গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার নিহত হয়েছিলেন নিজের ঘরেই। কুমিল্লার ১০ বছরের শিশু হুসাইন জীবিকার তাগিদে নারায়ণগঞ্জের সড়কে হকারি করতে এসে খুন হয় রাজপথে। কেউ নিহত হয়েছিলেন বিনা কারণে, কেউ আবার মৃতদের কাফেলায় নাম লিখিয়েছিলেন মৃত্যুর মিছিল রুখতে এসে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের বীর ছাত্র-জনতা প্রাণপণ এক লড়াইয়ে নেমেছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর করা সরকারি–বেসরকারি হিসাবে দেখা যায়, অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ৫৪ জন শহীদ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ২১ জন। বাকি ৩৩ জনের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শহীদেরা হলেন:

১. মো. আরমান মোল্লা (৩৩)। পিতা: ইউসুফ আলী। ঠিকানা: লক্ষ্মীবরদী, গোপালদী পৌরসভা, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

২. মো. আদিল (১৫)। পিতা: আবুল কালাম।  ঠিকানা: ভূইঁঘর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।

৩. মো. ইরফান ভূঁইয়া (২১)। পিতা: মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। ঠিকানা: মাদানী নগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪. ইমরান হাসান (১৯)। পিতা: মো. ছালে আহম্মেদ। ঠিকানা: গঙ্গানগর চর রমজান, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ।

৫. মো. জামাল (২৮)। পিতা: মো. হারুন। ঠিকানা: জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৬. মো. তুহিন (৩৬)। পিতা: মো. শহীদুল ইসলাম। ঠিকানা: উত্তর রসুলবাগ (৩ নম্বর ওয়ার্ড), সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৭. মোহাম্মদ সাইফুল হাসান দুলাল (৫১)। পিতা: মো. জাবেদ আলী মোল্লা। ঠিকানা:  চনপাড়া পুণর্বাসন কেন্দ্র, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৮. পারভেজ হাওলাদার (২৫)। পিতা: মো. মজিবর হাওলাদার। ঠিকানা: নিমাইকাশারী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৯. ফারহান ফাইয়াজ রাতুল (১৭)। পিতা: আলহাজ শহীদুল ইসলাম। ঠিকানা: বরপা, তারাব পৌরসভা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

১০. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খান (৪৫)। পিতা: মৃত মো. লুতফর রহমান খান। ঠিকানা:  কাঞ্চন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

১১. মাবরুর হোসেন রাব্বি (২৫)। পিতা: আবদুল হাই। ঠিকানা: বটতলা, দক্ষিণ শিয়ারচর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।

১২. রিয়া গোপ (৬)। পিতা: দীপক কুমার গোপ।  ঠিকানা: নয়ামাটি, নারায়ণগঞ্জ সদর।
১৩. সফিকুল (৪৬)। পিতা: আবদুল আজিজ। ঠিকানা: বালুয়াকান্দি, বিশনন্দী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

১৪. মো. মোহসীন (৬৩)। পিতা: ছলিম উদ্দিন। ঠিকানা: বাহাদুরপুর, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

১৫. মো. সজল মিয়া (২০)। পিতা: মো. হাসান আলী। ঠিকানা: মাহমুদপুর, সন্মান্দী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

১৬. আহসান কবির ওরফে মো. শরীফ (৩৪)। পিতা: মো. হুমায়ুন কবির। ঠিকানা: দক্ষিণ সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

১৭. মো. জনি (১৭)। পিতা: মো. ইয়াসিন।  ঠিকানা: বালুয়া দিঘীরপাড়, আমিনপুর, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।

১৮. মো. ছলেমান (২১)। পিতা: মিরাজ বেপারী। ঠিকানা: মাদানী নগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

১৯. মো. স্বজন (২৫)। পিতা: মো. জাকির হোসেন। ঠিকানা: কুশিয়ারা পূর্বপাড়া, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।

২০. হযরত বিল্লাল (২০)। পিতা: মো. হোসেন। ঠিকানা: কলতাপাড়া, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ।

২১. বাবুল মিয়া (৪৯)। পিতা: মো. আলী হোসেন। ঠিকানা: দুপ্তারা, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

২২. আবদুস সালাম (২২)। পিতা: সাবের বিশ্বাস। ঠিকানা: চর জগন্নাথপুর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। মৃত্যুস্থান: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

২৩. আবুল হোসেন মিজি (বয়স অজানা)। পিতা: দেলোয়ার হোসেন মিজি। স্থায়ী ঠিকানা: দক্ষিণ বালিয়া, চাঁদপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জ।

২৪. আলাউদ্দিন (৩৫)। পিতা: সিদ্দিকুর রহমান সরদার। স্থায়ী ঠিকানা: শেখ নগর, উত্তর মতলব, চাঁদপুর। মৃত্যুর স্থান: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

২৫. আবদুর রহমান (৫৫)। পিতা: হাসান দেওয়ান। স্থায়ী ঠিকানা: পূর্ব বালিয়া, চাঁদপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: ভূঁইঘর জোড়া পুকুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।

২৬. আবদুল লতিফ (৪০)। পিতা: নিজাম উদ্দিন। স্থায়ী ঠিকানা: বল্লব বিষু, কাউনিয়া, রংপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

২৭. আরাফাত হোসেন আকাশ (১৫)। পিতা: আকরাম হোসেন। স্থায়ী ঠিকানা: অজ্ঞাত। অস্থায়ী ঠিকানা: শিমরাইল খানকা মসজিদ, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

২৮. আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৬)। পিতা: আবদুল ওয়াহেদ আলী। স্থায়ী ঠিকানা: বটতলা, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা। অস্থায়ী ঠিকানা: বরপা, তারাব পৌরসভা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

২৯. মো. আল মামুন আমানত (৪০)। পিতা: মো. আবদুল লতিফ। স্থায়ী ঠিকানা: রামকৃষ্ণপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা। অস্থায়ী ঠিকানা: জালকুড়ি, নারায়ণগঞ্জ।

৩০. পারভেজ হোসেন (২৩)। পিতা: সোহরাব হোসেন। স্থায়ী ঠিকানা: মুরাদনগর, কুমিল্লা। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৩১. ফয়েজ আহমেদ (৩০)। পিতা: আলাউদ্দিন বেপারী। স্থায়ী ঠিকানা: রায়পুর, লক্ষ্মীপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জ।

৩২. মো. মেহেদী (২০)। পিতা: সানাউল্লাহ। স্থায়ী ঠিকানা: গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ। অস্থায়ী ঠিকানা: সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ।

৩৩. জামাল হোসেন সিকদার (২১)। পিতা: মো. মহসিন সিকদার। স্থায়ী ঠিকানা: পূর্ব হোসনাবাদ, গৌরনদী, বরিশাল। মৃত্যুর স্থান: শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ।

৩৪. মিনারুল ইসলাম (২৫)। পিতা: মৃত এনামুল। স্থায়ী ঠিকানা: গুড়িপাড়ী, কাশিয়ানী, রাজশাহী। মৃত্যুর স্থান: শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ।

৩৫. মোনায়েল  আহমেদ ইমরান ওরফে আসাদ (১৬)। পিতা: সোহরাব মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা:  রামপুর, গোয়ালনগর, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মৃত্যুর স্থান: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৩৬. মো. মনির হোসেন (৪৬)। পিতা: মমতাজুর রহমান। স্থায়ী ঠিকানা: মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা সদর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৩৭. মো. রফিকুল ইসলাম (বয়স অজানা)। পিতা: মৃত মোমিন মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৩৮. মো. জোবায়ের ওমর খান (বয়স অজানা)। পিতা: জাহাঙ্গীর আহমেদ খান। স্থায়ী ঠিকানা: কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৩৯. মোহাম্মদ হোসেন (বয়স অজানা)। পিতা: মো. মানিক মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪০. মিলন মিয়া (৩৮)। পিতা: আলী হোসেন হাওলাদার। স্থায়ী ঠিকানা: ঘাটারা, দুমকি, পটুয়াখালী। মৃত্যুর স্থান: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪১. মো. রুবেল মিয়া (৩০)। পিতা: মো. নান্নু মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা: মীর ওয়ারিশপুর সরদারবাড়ি, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪২. রাকিব (২০)। পিতা: মোশারফ মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা: বাইন্না, বরিশাল সদর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৩. মো. রাব্বি (২২)। পিতা: আবদুর রহিম। স্থায়ী ঠিকানা: সরিষাবাড়ী, জামালপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৪. রাসেল (২০)। পিতা: পিন্টু রহমান। স্থায়ী ঠিকানা: কসবা, মান্দা, নওগাঁ। অস্থায়ী ঠিকানা: দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৫. মো. রাসেল বকাউল (বয়স অজানা)। পিতা: মো. নুরুল বকাউল। স্থায়ী ঠিকানা: রাজারগাঁও, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৬ সেলিম মণ্ডল (২৯)। পিতা: ওহাব মণ্ডল। স্থায়ী ঠিকানা: চর জগন্নাথপুর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। মৃত্যুর স্থান: শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ।

৪৭. মো. সজীব মিয়া (১৮)। পিতা: মো. সানাউল্লাহ। স্থায়ী ঠিকানা: সেনবাগ, কাবিলপুর, নোয়াখালী। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৮. শাহ জামান (২৬)। পিতা: হারুন ভূঁইয়া। স্থায়ী ঠিকানা: রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪৯. সুমাইয়া আক্তার সিমু (২০)। পিতা: মৃত সেলিম মাতবর। স্থায়ী ঠিকানা: মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৫০. সোহেল আহমেদ (২১)। পিতা: তোফলেসুর রহমান। স্থায়ী ঠিকানা: কাকড়া, বিয়ানীবাজার, সিলেট। মৃত্যুর স্থান: শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ।

৫১. সৈয়দ গোলাম মোস্তফা রাজু (৩৫)। পিতা: সৈয়দ আবদুল করিম। স্থায়ী ঠিকানা: পশ্চিম দিঘা, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৫২. মো. শাহিন মিয়া (২৩)। পিতা: হাসান আলী। স্থায়ী ঠিকানা: বরিশাল। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৫৩. মো. হৃদয় (২৮)। পিতা: ছবেদ আলী। স্থায়ী ঠিকানা: দূর্গাপুর, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ। অস্থায়ী ঠিকানা: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৫৪. মো. হোসাইন মিয়া (১০)। পিতা: মানিক মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা: রাজামেহার,  দেবীদ্বার, কুমিল্লা। মৃত্যুর স্থান: শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ।