দুই দিনের ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি; কখনো হালকা, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি। এর মধ্যেই সকালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসন রাজা মিলনায়তনে। কারও কারও সঙ্গে ছিলেন অভিভাবক। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কলরবে মুখর হয়ে উঠতে থাকে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।
শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ‘জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কৃতী সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে খোশগল্পে, কেউ আবার সেলফি তোলায় ব্যস্ত। সবারই চোখে মুখে ছিল সাফল্যের আনন্দ, উচ্ছ্বাস।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় সুনামগঞ্জে আজ রোববার সকাল ১০টায় শুরু হয় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানান। এরপর ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাতে থাকে শিল্পকলা একাডেমিতে। প্রবেশপথে নিবন্ধন বুথ থেকে কার্ড, নাশতা ও ক্রেস্ট নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এবার অনুষ্ঠানে জেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ২২০ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল।
সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক তাজিন হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সুনামগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পাঠানো প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের চিঠি পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠানে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোহাম্মদ রাজু আহমেদ।
অতিথিদের মধ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহরের সৃজন বিদ্যাপীঠের উপাধ্যক্ষ সমাজকর্মী কানিজ সুলতানা, সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মী পঙ্কজ কান্তি দে, সিলেটে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ, অভিভাবক হারিছ উদ্দিন, শিক্ষার্থী তাহিয়া আনজুম।
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সব সময় ভালোর সঙ্গে থাকতে হবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। জীবনে হতাশা আসবে, কিন্তু থামা যাবে না। মনে রাখতে হবে, পরিবার, সমাজ, দেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিযোগিতাকে ভয় পাওয়া যাবে না। প্রস্তুতি নিতে শুরু করো। আলোকিত মানুষ হতে হবে। নিজেকে ভালো জায়গায় নিতে হবে।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জিপিএ-৫ পাওয়াটাই শেষ কথা নয়। সন্তানদের কখনো নিরুৎসাহিত করবেন না। সাহস দিন, পাশে থাকুন। দেখবেন সে আপনার প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে।’
সুমনকুমার দাশ বক্তব্য শুরু করেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবন থেকে নেওয়া অনুপ্রেরণার গল্প দিয়ে। তিনি বলেন, ‘তোমরা একেকজন একেকটি অনুপ্রেরণার গল্প হও, আমরা সেটাই চাই। তোমরা একদিন হয়তোবা বড় বড় দায়িত্বে থাকবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে তোমাদেরই। এ জন্য নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা বাংলাদেশের জয় চাই। প্রথম আলো সব সময় তোমাদের পাশে থাকবে।’
শিক্ষক–সমাজকর্মী কানিজ সুলতানা বলেন, ‘সময়কে কাজে লাগাতে হবে। এই সময় আর পাওয়া যাবে না। আজকের কাজ কাল করবে, এই চিন্তা করা যাবে না। তোমাদের স্বপ্ন দেখার সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মুঠোফোনে সময় কাটানোটা যেন শেখার জন্য হয়। ভালোর জন্য হয়।’
অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা থেকে এসেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী বিরাজ মোদক। সঙ্গে ছিল তার বড় ভাই। বিরাজ বলে, ‘সকাল আটটায় রওনা দিয়েছি। প্রচুর বৃষ্টি ছিল। তবু অনুষ্ঠান মিস করতে চাইনি। এসে ভালো লেগেছে।’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গান, নৃত্য। জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের থিম সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধুসভার দৃষ্টি তালুকদার ও তাঁর দল। নাচ-গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজে অংশ নেওয়া ১০ জন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে ডেকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মঞ্চ মাতান সংগীতশিল্পী সোহেল রানা, রিতা আচার্য, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায় তালুকদার ও শামান্তানা শামা। কমেডি পরিবেশন করে ফাতিয়া ইসলাম ও সৌর্হাদ্য রায়।
সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি শফিকুল ইসলাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করেন।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি ও সহযোগিতায় আছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।