আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ টাকা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চতুর্থ শ্রেণির তিন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে ৩৪ লাখ টাকা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আজ রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন হুজরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির তিনটি পদে নিয়োগ দিয়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি। এর মধ্যে কিছু টাকা অনুদান হিসেবে বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা ছিল। টাকা না পেয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের যোগ দিতে দেননি।

এ নিয়ে হুজরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তোলেন। তবে অভিযুক্ত দুজন টাকা নেওয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলী। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কবিরুল ইসলাম, সাহেরা খাতুন, নাসিমা খাতুন, এনামুল হক, আজিজুল ইসলাম, আবু তালেব, হাবিবুর রহমান, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, শহিদুল ইসলাম ও সুনীল সরেন উপস্থিত ছিলেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির তিনটি পদ শূন্য ছিল। এ জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান এবং শিক্ষক প্রতিনিধি ও সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নিয়োগ দিতে সম্প্রতি তৎপরতা শুরু করেন। আবুল কালাম আজাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। আর মতিউর রহমান এই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে ৪১ জন আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি তাঁদের পছন্দের তিন প্রার্থীর নাম জানিয়ে বলেন, পদগুলোতে তাঁদেরই নিয়োগ দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ–বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পারলে নিয়োগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান। তখন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম তাঁকে (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে) বলেন, প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু টাকাপয়সা নিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া যেন তিনি সম্পন্ন করে ফেলেন। এরপর তিনি নিয়োগ দিতে সম্মত হন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষক বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই পরিচালনা কমিটির সভাপতি তিন প্রার্থীর নাম জানিয়ে দেন। এ জন্য গত ২২ জুন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ওই প্রার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়। এরপর পরিচালনা কমিটির সভা ছাড়াই সভাপতি ৩ জুলাই নিয়োগপত্র ইস্যু করেন এবং ৯ জুলাই যোগদান দেখিয়ে তিনজনকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন।

মোজাহার আলী বলেন, মতিউর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ তিন প্রার্থীর কাছ থেকে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা থেকে চার লাখ বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা দেননি। এর প্রতিবাদ করার কারণে শিক্ষক প্রতিনিধি ও সভাপতি তাঁর চাকরিচ্যুতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন সভাপতি। তিনি এ নিয়োগ বাতিল চান।

অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ নিয়োগের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তুলেছে, তার সবই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’ বিদ্যালয়ের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, নিয়ম মেনে সঠিকভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

অনিয়ম হচ্ছে জেনেও নিয়োগ দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি।