সিরাজগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার ঘটনায় এলাকা থমথমে

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ভোগলমান চারমাথা বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট খোলেনি
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকারকে (৬০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজেরা কথা বললেও আতঙ্কে গণমাধ্যমকর্মীসহ বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলছেন না স্থানীয় লোকজন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ভোগলমান চারমাথা বাজারে আবদুল কুদ্দুস সরকারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আজ সকালে ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ওষুধের দোকান ছাড়া বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। হত্যাকাণ্ডটি যেখানে ঘটেছে, তা বেঞ্চ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে রক্তের দাগ লেগে আছে।

আরও পড়ুন

নিহত আবদুল কুদ্দুস সরকারের বাল্যবন্ধু ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আবদুল কুদ্দুস সরকার পাঁচ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ হয়েছে বলে শুনিনি। তবে তাঁকে কেন এভাবে গুলি করে হত্যা করা হলো, তা বুঝতে পারছি না।’

ভোগলমান চারমাথা বাজারের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত তাড়াশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ জানান, সকাল থেকে তাঁরা এখানে আছেন। রাতে আরেকটি দল দায়িত্ব পালন করেছে।

বাজার থেকে উত্তরমুখী পাকা রাস্তা ধরে খানিক যেতেই নিহত চেয়ারম্যানের বাড়ি দেখা যায়। বাড়ির সামনে উঠানজুড়ে মানুষের ভিড়। আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি এখানে ভিড় করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। কবরের জন্য উঠানের এক পাশে বাঁশ কাটছিলেন কয়েকজন। সেখানে কথা হয় নিহত আবদুল কুদ্দুস সরকারের দুই ছেলে রুহুল আমিন ও জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। বড় ছেলে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার বাবার এমন অবস্থা হবে, আমরা কখনো ভাবিনি। তাঁর শত্রু আছে বলে জানতাম না, তবে কেন তাঁকে এমনভাবে হত্যা করা হলো?’

নিহত আবদুল কুদ্দুস সরকার দেশীগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং ভোগলমান চারমাথা গ্রামের বাসিন্দা। হামলার সময় তিনি ভোগলমান চারমাথা বাজারে তাঁর ছেলে মো. রুহুল আমীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে ছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী ভোগলমান চারমাথা বাজারে আসে। তারা হ্যান্ডমাইকে বাজারের লোকজনকে বাজার ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে। এরপর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকারের ছেলের কীটনাশকের দোকানে ঢুকে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর (কুদ্দুস) ওপর কয়েকটি গুলি চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় তাড়াশ থানার পুলিশ।

রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন তিনি।

আজ বাদ আসর স্থানীয় আড়ংগাইল কবরস্থান মাদ্রাসা মাঠে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে আবদুল কুদ্দুস সরকারকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।