রাজশাহীতে ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে সৌন্দর্যহানি, জামায়াতের সমালোচনায় রাবির সমন্বয়ক
রাজশাহীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন সামনে রেখে ব্যানারে ফুটওভারব্রিজ ও ফেস্টুনে দৃষ্টিনন্দন ল্যাম্পপোস্ট ছেয়ে গেছে। এতে সৌন্দর্যহানির প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তাঁর মতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ল্যাম্পোস্টগুলোর সৌন্দর্যের কথা ভেবে আওয়ামী লীগও কোনো ফেস্টুন লাগায়নি। বিএনপি-জামায়াতের হাত দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলো। এখন অন্যরাও এ কাজ করবে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী শনিবার (১৮ জানুয়ারি)। দীর্ঘ সময় পর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এমন সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে দলটি। এ উপলক্ষেই জেলা ও মহানগর জামায়াতের ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে রাজশাহী। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে শোভা পাচ্ছে জামায়াতের আমিরের ছবি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তাঁর ফেসবুক আইডিতে ল্যাম্পপোস্ট ও ফুটওভারব্রিজে টানানো জামায়াতের ব্যানার-ফেস্টুনের তিনটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় হয়তো তারা সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করে পোস্টার লাগায়নি এই ল্যাম্পপোস্টগুলোতে। আপনারাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, আসলে সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই, আসলে রাজনীতিই জীবন।’ তিনি আরও লেখেন, ‘রাজনৈতিক বিতৃষ্ণা আমাদের জেনারেশনকে গ্রাস করার মূল কারণ আমাদের পালস বুঝে রাজনীতি কোনো সংগঠন করতে পারে না। যারা সৌন্দর্যের কদর করে না, আমি তাদের ঘৃণা করি। এমন রাজনীতি শুরু করলে আগামী নির্বাচনেও আমি ভোট বর্জন করব।’
তাঁর এই স্ট্যাটাসে পক্ষে–বিপক্ষে অনেকেই মন্তব্য করেন। এমন অবস্থায় পরে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘জামায়াতকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর একটা ন্যারেটিভ (বয়ান) দাঁড় করাচ্ছে—আন্দোলনে জামায়াত এত সহযোগিতা করেছে, আপনাকে জামায়াত পরিবার রেখেছে, শিবিরের ভাইয়েরা সেল্টার দিয়েছে। আমার সমীকরণ খুব সোজা! আমি বাংলাদেশের এই পলিটিক্যাল ব্যবস্থাপনার ঘোর বিরোধী। আপনি পোস্টার লাগিয়ে সম্মেলন করবেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করবেন সৌন্দর্য নষ্ট করে, আপনি শুধু একটি দিনের জন্য পোস্টার টানাচ্ছেন কিন্তু এখানে পোস্টার লাগানোর রীতি আপনি প্রচলন করলেন। একসময় এখানে সার্বক্ষণিক পোস্টার ঝুলবে, লিখে দিতে পারি এটা।’
ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও লেখেন, ‘আর জুলাইয়ের জামায়াত, বিএনপি, ছাত্রশিবির, ছাত্রদল নিয়ে এখন ন্যারেটিভ খুঁজ লাভ নেই। তখন তারা আমাকে সন্তানের মতো লালন–পালন করেছে, আমাদের সেল্টার দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, পাহারা দিয়েছে। জুলাইয়ে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, জামায়াত, বিএনপি আমাদের জন্য বুক পেতে দিয়েছে। তার মানে এই না যে তাদের ভুলের সমালোচনা করব না। সমালোচনা না করে করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছিলাম আমরাই।’
স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, ‘যে দলের হোন না কেন, অন্ধ আনুগত্য কইরেন না। জামায়াতের যে পরিবারটি আমাকে সেই সময় আশ্রয় দিয়েছিল, এখন আমি তাদের পরিবারের বড় সন্তান। আমি জুলাইয়ে আরও একটি পরিবার পেয়েছি, তবে ভুল যে দলই করবে, আমি তার সমালোচনা করব। আর একটা বাস্তব সত্য কথা হলো, আপনি যাঁর আগমন উপলক্ষে পোস্টার, ফেস্টুন লাগাচ্ছেন, সে হয়তো নিজেও জানে না, আপনারাই এই বাড়াবাড়িটা করতেছেন। আশা করছি, সব দলের কর্মীরা অন্ধ আনুগত্য বর্জন করবেন, তাহলে আর কোনো জুলাই লাগবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে সালাউদ্দিন আম্মার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই ল্যাম্পপোস্ট করার পরে আওয়ামী লীগ আরও এক বছর ছিল। সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করে তারা এর সঙ্গে কোনো ফেস্টুন লাগায়নি। এখন জামায়ত এটা শুরু করল, মানে অন্যরাও এখন করবে। এটা নিয়েই তিনি কথা বলতে চেয়েছেন।
এর আগে ল্যাম্পপোস্টে বিএনপির ফেস্টুন দেখেও গত বছরের ৫ নভেম্বর ছবি পোস্ট করেছিলেন আম্মার। লিখেছিলেন, ‘ভাই, কী শুরু করলেন আপনারা? এই কাজ তো আওয়ামী লীগও করে নাই।’
জানতে চাইলে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এগুলো তাদের আলাদা বিভাগ দেখে। তবে তিনি যতটুকু জানেন, নিয়ম মেনেই এগুলো লাগানো হয়েছে। ১৮ জানুয়ারির অনুষ্ঠানের পর তারা নিজ দায়িত্বে আবার সরিয়ে ফেলবেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরিফ উদ্দীন বলেন, তিনি আজ অফিসে আসার সময় ব্যানার–ফেস্টুন দেখেছেন। এ জন্য রাজস্ব বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়, নিলে তো তিনি জানতেন। তিনি বলেন, এগুলো তিন দিন থাকবে। এরপর হয়তো সিটি করপোরেশনের লোক দিয়েই আবার অপসারণ করতে হবে।