শীত সামনে রেখে বুরগি বানানোর ধুম বান্দরবানের বমপল্লিতে

বুরগি বুনতে ব্যস্ত এক বম নারী। সম্প্রতি বান্দরবানের ফারুকপাড়ার বমপল্লিতে
প্রথম আলো

শীত সামনে রেখে বুরগি (কম্বল) বানানোর ধুম পড়েছে বান্দরবান জেলার শহরতলির বমপল্লিগুলোতে। শীতে পর্যটকদের কারণে চাহিদা বাড়ে, তাই বাড়তি আয়ের আশায় বুরগি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন বাসিন্দারা।

গত সোমবার বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের ফারুকপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ঘরে কোমর তাঁতে বুরগির বুনন চলছে। যাঁরা বুরগি তৈরি করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নারী। পাড়ার বাসিন্দা রুনকিম বম বলেন, নভেম্বর থেকে পর্যটনের মৌসুম শুরু হয় বান্দরবানে। শীতের কারণে এ সময় পর্যটকেরা বুরগি কিনতে পছন্দ করেন। প্রায় মার্চ পর্যন্ত বুরগি বিক্রি হয়। তাই নারীরা, বিশেষ করে বাড়তি আয়ের জন্য বুরগি বোনেন। তিনি নিজে এ পর্যন্ত পাঁচটি বুরগি বুনন করেছেন।

সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় বুরগি বুননে এখন খুব একটা লাভ হয় না বলে দাবি রুনকিমের। তিনি বলেন, একটি বুরগি বানাতে প্রায় দেড় কেজি সুতার প্রয়োজন। বুননে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি কেজি সুতার দামই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবু পরিশ্রম ভুলে কিছু বাড়তি টাকার আসায় বুরগি বুনছেন তিনি।

ফারুকপাড়ার মতো লাইমিপাড়া, গ্যেৎসেমানিপাড়াসহ কয়েকটি বমপল্লিতেও গিয়ে দেখা যায় একই ধরনের চিত্র। ফারুকপাড়া-সংলগ্ন জেলার পর্যটন এলাকা শৈলপ্রপাতে কথা হয় বুরগিসহ তাঁতে তৈরি কাপড়ের বিক্রেতা রুননেম সাং বমের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর জেলায় পর্যটক কমতে শুরু করে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো পর্যটক আশানুরূপ বাড়েনি। তবু বিক্রির আশায় এরই মধ্যে তিনি আশপাশের পল্লি ঘুরে বুরগি, শীতের চাদর, মাফলার সংগ্রহ করা শুরু করেছেন।

রুননেম সাং বম বলেন, বুরগি মানভেদে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চাদর বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় মাফলার বিক্রি করেন তিনি।

এলাকার অশীতিপর সানচে বম বলেন, শহরতলির বমপাড়াগুলোতে এখন জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জায়গাজমির সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাগান করে আর পরিবার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বম নারীরা কোমরতাঁতে পোশাক তৈরি, বাঁশের পণ্য তৈরির মাধ্যমে আয় করে পরিবারের খরচ সামাল দিচ্ছেন।

উষ্ণতা দেওয়ার পাশাপাশি সূক্ষ্ম বুনন আর কারুকাজের জন্য পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও চাহিদা রয়েছে বুরগির। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জুমের ধান কাটা শেষ হলে পুরোদমে বুরগি, মাফলার ও চাদর তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বম নারীরা।