‘তালগাছের গ্রামে’ মোড়ে মোড়ে বিক্রি হয় রস
গ্রামের সড়কের পাশে, পুকুরপাড়ে, ফসলের মাঠে—সর্বত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ১০ হাজারের বেশি তালগাছ। এ কারণে এটিকে তালগাছের গ্রাম বলে এক নামে চেনেন উপজেলার মানুষজন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নে অবস্থিত গ্রামটি। নাম কাকিলাদহ।
বিকেল হলেই গ্রামের মোড়ে মোড়ে তালের রস নিয়ে বসেন কৃষকেরা। একসঙ্গে অনেক তালগাছ দেখতে ও রস খেতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন মানুষেরা। কেউ কেউ বাড়ির জন্য বোতলে ভরে নিয়ে যান তালের রস।
কুষ্টিয়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আমলা এলাকা। সেখান থেকে যে কাউকে তালগাছের গ্রামের কথা বললেই সরু একটা পিচঢালা পথ দেখিয়ে দেবেন, যেটি চলে গেছে কাকিলাদহ গ্রামের দিকে।
গ্রামটিতে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি তালগাছ রয়েছে জানিয়ে কাকিলাদহ গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সুন্নত আলী প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে প্রথম তালগাছ রোপণ করেছিলেন দাউদ আলী নামের এক ব্যক্তি। সেটা ৬০ থেকে ৬৫ বছর আগের কথা। এরপর তাঁর দেখাদেখি এলাকার মানুষজন জমির আল ও সড়কের পাশে তালগাছ লাগাতে থাকেন। এভাবেই কাকিলাদহ গ্রাম তালগাছে ভরে যায়।
রস ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, তালগাছকে কেন্দ্র করে গ্রামের অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করেন। এলাকার অনেক পরিবার তালের রস, শাঁস, পাকা তাল ও তালপাতা বিক্রি করেন।
গত শুক্রবার বিকেলে কাকিলাদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি সারি তালগাছ। মাঠের মধ্যে তালগাছ প্রায় একই উচ্চতায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই মোটরসাইকেলে করে কাকিলাদহ গ্রামের বিভিন্ন দিকে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করতেই তাঁরা বলছেন, আজ রসের খুব চাহিদা। পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রামের একদিক থেকে অন্যদিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তালের রস খেতে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রসের গল্প শুনেই খেতে আসা। কিন্তু বেশি রস পাননি। দুই গ্লাস খেতে পেরেছেন। বাড়িতে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা আর হলো না। অন্য একদিন আবার আসবেন।
গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরমকালের চার মাসে গ্রামের কৃষকেরা কৃষিকাজের পাশাপাশি তালগাছকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তালের রস, শাঁস, পাকা তাল ও তালপাতা বিক্রি করে এ আয় হয়। অন্তত ৫০ জনের বেশি কৃষক তালের রস বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল–বিকেল সেখানে রস খেতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বিকেলে ভিড় বেশি হয়।
গাছ থেকে তালের রস নামাচ্ছিলেন কৃষক আশরাফুল ইসলাম। ছয়টি গাছ থেকে নামানো রস ১০ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় তাঁর।
এ সময় আশরাফুল বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে সকাল-বিকেল দুই বেলা তালগাছের রস সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া কৃষিকাজও করেন। প্রতিদিন ৬০ লিটার রস সংগ্রহ করেন। এক গ্লাস রস ১০ টাকায় বিক্রি করেন। এক লিটারের জন্য নেন ৫০ টাকা। রস বিক্রি করতে বাইরে কোথাও যেতে হয় না। গাছের নিচে বসে থাকলেই নিমেষেই শেষ হয়ে যায়। আবার অনেকে গাছের নিচে বসে তালের শাঁসও বিক্রি করেন।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আহসান কবির প্রথম আলোকে বলেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছের ব্যাপক ভূমিকা থাকে। প্রতিটি গ্রামের সড়কের পাশে ও মাঠে তালগাছ রোপণ করা উচিত।
কাকিলাদহে তালগাছের মাধ্যমে কৃষকদের বাড়তি আয় হচ্ছে উল্লেখ করে মিরপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাইম হোসেন বলেন, গ্রামটিতে শতাধিক কৃষকের প্রত্যেকে তালগাছ থেকে চার মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন।