সময়ের মুখ

দৌড়ে গিয়ে চোরকে জাপটে ধরি, পুরস্কারের কথা জানতাম না

মোশারফ হোসেন

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নিয়মিত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও সেচপাম্প চুরির ঘটনা ঘটে। এতে বিপাকে পড়েন কৃষকেরা। ফসলি জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হয়। কোনোভাবেই চুরি ঠেকানো যাচ্ছিল না। পরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চোরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। রাত জেগে চোর ধরিয়ে দিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন মোশারফ হোসেন (৩০) নামের এক ইজিবাইকচালক। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল মান্নান

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগছে? 

মোশারফ: অনেক ভালো। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি কি জানতেন চোর ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে? 

মোশারফ: না। চোর ধরার পরও বিষয়টি জানতাম না। পরে আমাদের চেয়ারম্যান (ইউনিয়ন পরিষদ) সাহেব আমাকে পুরস্কারের কথা জানান। আমি আসলে টাকার জন্য চোর ধরিনি। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি চোর ধরিয়ে দিলেন, পুরস্কার পেলেন, আপনাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলো—কেউ কিছু বলেছে? 

মোশারফ: গ্রামের অনেকেই বাড়িতে এসে বাহবা দিয়েছে। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: রাত জেগে চোর ধরার চিন্তাটি মাথায় এল কেন? 

মোশারফ: আমার পরিবার কৃষিকাজ করে। আমি দেখেছি ট্রান্সফরমার চুরির পর কৃষকেরা কতটা বিপাকে পড়েন। একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেলে নতুন লাগাতে অনেক সময় লাগে। তখন ধানি জমিতে সেচের ব্যাপক সমস্যা হয়। তাই চোর ধরতে কৃষক জিল্লুর রহমানকে নিয়ে রাতে পাহারা দেওয়া শুরু করি। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চোর ধরলেন কীভাবে? 

মোশারফ: রাত তিনটার দিকের ঘটনা। আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয়েছি। এ সময় দেখতে পাই এক ব্যক্তি বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে ওপরে উঠছেন। তখন চোর চোর বলে চিৎকার করি। নিজেও দৌড়ে খুঁটির কাছে যাই। ততক্ষণে চোর খুঁটি থেকে নেমে দৌড় দিয়েছে। আমিও দৌড়ে গিয়ে চোরকে পেছন থেকে জাপটে ধরি। এর মধ্যে গ্রামের লোকজন চলে আসে। এ ঘটনা গত মার্চের। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জাপটে ধরলেন, ঝুঁকি ছিল না? 

মোশারফ: হ্যাঁ। ঝুঁকি ছিল, সেটা জানতাম। কিন্তু এটা করা ছাড়া আর উপায় ছিল না। যেদিন চোরকে ধরি, তার আগের দিন পাশের গ্রাম থেকে একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তখন বোরো ধানের মৌসুম ছিল। ট্রান্সফরমার চুরি হলে কৃষকদের অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হতো। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জেলা প্রশাসকের হাত থেকে পুরস্কারের টাকা পেলেন গত বৃহস্পতিবার। টাকা দিয়ে কী করবেন? 

মোশারফ: আমি পুরোনো একটা ইজিবাইক চালাই। সেটা দিয়ে যা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে। এখন ভাবছি, পুরোনো ইজিবাইকটি বিক্রি করে দেব। বিক্রির টাকা আর পুরস্কারের টাকা মিলিয়ে নতুন একটি ইজিবাইক কিনব। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পরিবারে কে কে আছে? 

মোশারফ: বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এখন ট্রান্সফরমার চুরি হয়? 

মোশারফ: আমাদের ইউনিয়নে (রূপনারায়ণকুড়া) এখন পর্যন্ত আর কোনো ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা শুনিনি।