সিলেটের বাপা নেতার সাক্ষাৎকার

সুরমা বাঁচাতে সীমান্তের ১৭ কিলোমিটার এলাকা খনন জরুরি

সিলেটের নদ-নদীগুলো দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে প্রথম আলো কথা বলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিমের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

সিলেটের নদ-নদীর অবস্থা এখন কেমন?

আবদুল করিম চৌধুরী কিম: সামগ্রিকভাবে বলা যায়, সিলেটের নদ-নদীগুলোর অবস্থা ভালো নেই। দেশের সব নদ-নদীর অবস্থাই খারাপ। দখল-দূষণ চলছে। নদী হত্যার চেষ্টা অব্যাহত আছে। নদী যেন বেঁচে থাকে, সে উদ্দেশ্য নিয়েই নদীকর্মীরা কাজ করছেন। সরকার নদী রক্ষায় কমিশন গঠন করেছে, জাতীয় পানি আইন হয়েছে। আবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের পরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। দখল ও দূষণ রোধে পরিবেশবাদীদের লাগাতার আন্দোলন ও গণমাধ্যমের অব্যাহত প্রতিবেদনে জনমতও গড়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয় দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছে। দূষণ বন্ধে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়েছে। সে উদ্যোগ যদি সফল হয়, তবে নদী বাঁচবে। অন্যথায় নদী মুমূর্ষু অবস্থায় ধুঁকতে থাকবে।

প্রশ্ন:

নদী রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ রয়েছে বলছেন। এরপরও কেন নদীর অবস্থা ভালো নেই?

আবদুল করিম চৌধুরী কিম: নদী রক্ষার কাজ একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম। এ কাজ লোকদেখানো হলে হবে না। সরকার ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠন করে যে আশাবাদ তৈরি করেছিল, তা ইতিমধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে নদীর প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের বদলে স্বার্থান্বেষীদের হাতে কমিশনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায়। একইভাবে নদীর দখলদারদের তালিকা প্রণয়নের পর শুরু হয়েছিল উচ্ছেদ অভিযান। এখন সে অভিযান বন্ধ। সিলেটে সুরমা নদীর দুই তীরে এখনো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সুরমা নদীর তলদেশ ভরে আছে প্লাস্টিক বর্জ্যে। অবাধে চলছে পাহাড়-টিলা কাটা। ফলে নদী ভরাট হচ্ছে। প্রাকৃতিক ছড়া দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির কোনো প্রবাহ থাকে না। এ অবস্থায় সিলেটের প্রধান নদী যদি বিপন্নবোধ করে, সেখানে অন্য নদী কীভাবে ভালো থাকে?

প্রশ্ন:

সিলেটের নদী রক্ষায় করণীয় কী?

আবদুল করিম চৌধুরী কিম: নদী রক্ষার লড়াইয়ে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নদীর আইনি অধিকার জানা জরুরি। নদী রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে নদীর প্রতি মমত্ববোধ থাকা প্রয়োজন। সিলেটের নদ-নদীর সমস্যা সমাধানে প্রথম কাজ হচ্ছে, নদীর সীমানা চিহ্নিত করা। নদীকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা রয়েছে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীকে খনন করার দাবি জোরদার করতে হবে। খননের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে নাগরিক তদারকি দরকার। ছড়া-খাল ও নদীতে আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করতে হবে। নদীতীরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন নদীপ্রেমিক প্রজন্ম গঠন, যা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভব হবে না। কাজটি আমাদের শুরু করতে হবে।

প্রশ্ন:

সুরমা নদীর বিষয়ে কিছু বলুন...

আবদুল করিম চৌধুরী কিম: বিগত বছর আকস্মিক বন্যায় সিলেট বিভাগের মানুষকে আবারও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। বিভাগীয় শহর সিলেটকে সবচেয়ে বেশি কাবু হতে হয়। নাব্যতা হারিয়ে শান্ত নদী সুরমা হঠাৎ বৈরী রূপ ধারণ করে। এর কারণ সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া। সিলেট মহানগরকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে নগরের সুরমা খনন জরুরি। কিন্তু সুরমা নদীকে বাঁচাতে অমলসিদ এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৭ কিলোমিটার এলাকা খনন জরুরি। তবেই এ নদী পুনরায় প্রাণ ফিরে পারে।