কুমিল্লার চলন মহাবিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট, ভোগান্তি

কুমিল্লার চলন মহাবিদ্যালয় মাঠে প্রতি সোমবার বসে গরুর হাট। এতে কলেজ মাঠ কাদায় ভরে যায়। গরুর হাটের কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত সোমবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ছুটির দিন ব্যতীত প্রতি সোমবার কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা থাকে। ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালীন শত শত গরু এসে কলেজ মাঠে ভরে যায়। গরুর গোবর ও চনায় কলেজ মাঠে তখন দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এর রেশ থাকে সপ্তাহজুড়ে। তার ওপর পশুবাহী যানবাহনের চাপে কলেজে প্রবেশ করাও দায় হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত শিক্ষার্থী।

এই কলেজে আবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রও। আজ সোমবারও এইচএসসি পরীক্ষা আছে। এমন দুরবস্থা চলছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার চলন মহাবিদ্যালয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার সীমান্তে ২ দশমিক ৫ একর জায়গা নিয়ে চলন মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ মাঠের দক্ষিণ পাশে পুকুর। এরপর সড়কের দুই পাশে যুক্তিখোলা বাজার। কলেজটি বর্তমানে চৌদ্দগ্রাম, লালমাই (আগে লাকসাম উপজেলায় ছিল) ও নাঙ্গলকোট এলাকা ঘেঁষে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে নাঙ্গলকোট উপজেলার সঙ্গে যুক্ত। কয়েক বছর ধরে কলেজ মাঠে প্রতি সোমবার গরু–ছাগলের হাট বসে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গরুর হাটের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ।

গত ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শত শত গরু কলেজ মাঠে। কলেজের পশ্চিম ও উত্তর পাশ দিয়ে গরুর গাড়ি একের পর এক মাঠে প্রবেশ করছে। মাঠজুড়ে গরু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বাড়তে থাকে। মাঠ গরুর গোবর ও চনায় একাকার। এই কলেজে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রও। অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন মজুমদার তাঁর কক্ষে বসা।

জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে এখানে গরুর হাট বসছে। এ জন্য কলেজকে এলাকার লোকজন প্রতিবছর ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন।’ কিন্তু কলেজ সময়ে কীভাবে গরুর হাট বসছে, এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা গরুর হাট নিয়েছি কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে। এ জন্য প্রতি বাংলা বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি।’

কলেজের অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার গরুর হাট। মঙ্গলবার সকালেও গিয়ে দেখি কলেজ মাঠে গোবর। দুর্গন্ধে টেকা যায় না।’

যুক্তিখোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের দুজন বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিজেই কয়েকজন লোক দিয়ে গরুর হাট চালান। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন মজুমদার বলেন, ‘গরুর হাট থেকে টাকা পেয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখি কলেজের জন্য।’

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনোয়ার উল্লাহ মজুমদার বলেন, এলাকার লোকজন মিলে কলেজ করেছেন। তাঁরা সপ্তাহে এক দিন গরুর হাট বসায়।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব হাসান বলেন, ‘কলেজ মাঠে কোনোভাবেই গরুর হাট হতে পারে না।, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে গরুর হাট এটা আমার জানা নেই। কলেজ মাঠে গরুর হাট হতে পারে না।’