বগুড়ায় হামলায় যুবদল নেতার মৃত্যু, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত যুবদল নেতা রাশেদুল মিঞা (২৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
রাশেদুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ লোকজন গতকাল সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আবদুল হান্নানসহ ৬-৭ জনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান। রাশেদুল সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক রুহুল আমিন। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আবদুল হান্নান একই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, রাশেদুলের অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বৃহস্পতিবার কিডনি বিভাগে নেওয়া হয়। গতকাল সকালে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
বিএনপি ও যুবদলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাতলা উপজেলা বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির। অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম ও জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির এই দুই পক্ষ নানা বিষয় নিয়ে এখন মুখোমুখি অবস্থানে। নিহত রাশেদুল মিঞা মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন।
ঘটনার প্রসঙ্গে রাশেদুলের চাচা ও ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হকের নেতৃত্বে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে নেতা-কর্মীরা পাকুল্যায় ফিরছিলেন। বহরের একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক ও রাশেদুল। বহরটি পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছামাত্র আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা রাশেদুলকে ধাওয়া দেন। ভয়ে মোটরসাইকেল ফেলে তিনি একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই তাঁরা লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে রাশেদুলকে আহত করেন। এরপর টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে পাকুল্যা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমি পাকুল্যাতেই ছিলাম না। পাকুল্যা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরোধিতা করায় আমাকে এই হত্যাকাণ্ডে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’
যুবদল নেতা রাশেদুল মিঞার ওপর হামলার ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিলাদুন্নবী। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ লোকজন পাকুল্যা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নানসহ ৬-৭ জন নেতা-কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য রাশেদুলের মরদেহটি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।