শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর বরিশালে বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

পরিবহনশ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনার পর বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করা যাত্রীরা। আজ দুপুরে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালেছবি: সাইয়ান

বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে বাস ও তিন চাকার যানের শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর আজ রোববার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ আছে। এতে এ অঞ্চলের অসংখ্য যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে বাসশ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে ও সন্ধ্যায় মাহিন্দ্রাচালকদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ বাসশ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এর জেরে গতকাল থেকে বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

এমন পরিস্থিতিতে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে টার্মিনালে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। উজিরপুরগামী যাত্রী মো. মাসুদ বলেন, সব বাসের চলাচল বন্ধ। এ সুযোগে তিন চাকার যানের চালকেরা তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন। তিনি বলেন, গতকাল সকালে অসুস্থ ছেলেকে চিকিৎসা করাতে তিনি বরিশালে আসেন। এরপর বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আটকে পড়েন। বাধ্য হয়ে আজ দুপুরে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে বিকল্প পরিবহনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাঁকে।

বিক্ষুব্ধ বাসশ্রমিকেরা বলেন, শনিবার বাসচালক ও চালকের সহকারীকে মারধরের ঘটনার জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বাস চালাবেন না। শ্রমিকদের দাবি, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডের সামনের সড়কে মাদারীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী একটি বাস অপেক্ষা করছিল। এ সময় সেখানে একটি মোটরসাইকেল আটকে যায়। মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ছিলেন জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী কবিরের ঘনিষ্ঠ। এ সময় বাসটি জায়গা দিতে দেরি হলে মোটরসাইকেল আরোহীরা বাসচালক ও সহকারীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে বাসচালক মো. শাকিল ও শ্রমিক সৌরভকে মারধর করেন তাঁরা।

পরিবহনশ্রমিকদের সংঘর্ষের পর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে চলাচল করা সব বাস নথুল্লাবাদ টার্মিনালে রাখা হয়েছে
ছবি: সাইয়ান

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকা ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং সড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকেরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকা কাজী কবিরের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। বিক্ষোভের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করে সড়ক থেকে তুলে দেয়। তবে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা।

পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার পর তিন চাকার যানের (মাহিন্দ্রা) চালকেরা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করলে বাসশ্রমিকেরা তাতে বাধা দেন। কিন্তু সেই বাধা উপেক্ষা করেন তিন চাকার যানের শ্রমিকেরা। এতে বাসশ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হন। এর জেরে গতকাল সন্ধ্যায় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডের অপর প্রান্তে তিন চাকার যানের স্ট্যান্ডে এসে ক্ষুব্ধ বাসশ্রমিকেরা ১৫টি মাহিন্দ্রা ভাঙচুর করেন। এতে মাহিন্দ্রাচালক রাজু মিয়া, শাকিল আহমেদ ও আবাদুর রহমান আহত হন। তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় মাহিন্দ্রচালক ও শ্রমিকেরা মহাসড়কের ওপর মাহিন্দ্রা রেখে অবরোধ করেন। একই সঙ্গে কাশীপুরের দিক থেকে লাঠিসোঁটা হাতে আরেক দল মাহিন্দ্রাশ্রমিক বিক্ষোভ করে নথুল্লাবাদে এসে অবরোধকারী মাহিন্দ্রাশ্রমিকদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ সড়কের ওপর থেকে মাহিন্দ্রা ও আন্দোলনরত শ্রমিকদের সরে যেতে বললে তাঁরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল, কাচের বোতল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়ান। পরে পুলিশ শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কিছু রুটে সীমিত আকারে বাস চলাচল শুরু করলেও রোববার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখেন বাসশ্রমিকেরা। গতকালের সংঘর্ষের পর আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

পুলিশ বলছে, নথুল্লাবাদ টার্মিনালকেন্দ্রিক পরিবহনশ্রমিক নেতাদের মধ্যে দুটি পক্ষ আছে। তাঁদের মধ্যে থাকা বিরোধের সূত্র ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে। ফলে টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, হাতাহাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্রমিকেরা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।