খুলনায় আলু-পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা, কমেছে মাছের দাম

পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শনিবার খুলনার ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় আলু ও পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে পণ্য দুটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও কেউ তা মানছেন না। দাম বেড়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা গেলেও বাজারে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।

শনিবার খুলনার ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, মিস্ত্রিপাড়া কাঁচাবাজার, শেখপাড়া কাঁচাবাজার আর সোনাডাঙ্গা কেসিসি পাইকারি বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দামে আলু ও পেঁয়াজে বড় রকমের হেরফের হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাকির শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ী ও মজুতদারেরা আলু-পেঁয়াজ আটকে রেখে বাজারে সরবরাহ–ঘাটতি তৈরি করছেন। মাঝে কিছু জরিমানা হওয়ায় হয়তো তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। আবার ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ৬০ টাকা আলুর কেজি ক্রেতাকে বলতেও আমাদেরও লজ্জা লাগে, কিন্তু উপায় নেই। তবে পেঁয়াজ–আলু ছাড়া বাজারে পণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই।’

কম টাকা বেতনের চাকরি করি, এখন সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে। এক সপ্তাহে আগে ৫০ টাকায় আলু কিনেছি, এখন কিনতে হলো ৬০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেশি। খরচ বাঁচাতে সকালে একটু আলু বা কুমড়াভর্তা দিয়ে চালিয়ে নিতাম। তবে ভর্তার উপকরণ আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ বা কুমড়ার দাম যেভাবে বাড়ছে, সেটাও চালাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।
রেজওয়ান আহমেদ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী

বিভাগের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার নগরের সোনাডাঙ্গা কাঁচাবাজারের আড়তে দেখা যায়, পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। ওই বাজারে পাইকারি আলুর দাম প্রতি কেজি ৫৬ টাকা।

ওই পাইকারি বাজারের মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পূজার পর ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় এখানে বেড়েছে। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বেঁধে দিয়ে। সরকারের নিজের কাছে এসব পণ্য নেই। পরের জিনিসে দাম বাঁধলে চলে না। দাম বেঁধে দেওয়ায় আমদানিকারকেরা আমদানি করছে না। বেশি দামে আমদানি করে লসে বিক্রি করা যায় না। আমরাও ১৫-২০ দিন পেঁয়াজ বিক্রি করিনি। বেশি দামে কিনে বিক্রি করতে গিয়ে জরিমানা খেতে যাব কেন? সব মিলিয়ে দাম বাঁধায় ভালোর চেয়ে খারাপ হয়েছে।’
শনিবার খুলনার খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫২ থেকে ১৫৬ টাকা ডজন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের ডজন ১৪৪ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়।

আলু ও পেঁয়াজ খুলনার উৎপাদিত পণ্য না। এখানকার ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গ থেকে এসব পণ্য কিনে থাকেন। সেখানেই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আমরা চালান দেখেছি, খুলনার পাইকারি ক্রেতারা সেখান থেকে বেশি দামে পণ্য কিনছেন। এ কারণে এখানে তাঁদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যাঁরা চালান দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।
মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা

ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন খালিশপুরের বাসিন্দা মো. কামরুল হোসেন। তিনি বলেন, শীতের কিছু সবজির দাম সামান্য একটু কমেছে। এটাকে ঠিক কমা বলে না। তবে ধীরে ধীরে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লে দামও খানিকটা কমবে। তবে শিগগিরই দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার বাজারে ফুলকপি, শিম, লাউ, বেগুন, বাঁধাকপির মতো শীতের আগাম সবজির দাম কিছুটা কমেছে। কমেছে সব ধরনের শাকের দাম। তবে তা এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই প্রতি কেজি ৫০ টাকা বা তার বেশি। ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা, পটোল, মিষ্টিকুমড়া, ধুন্দুল, মুখি কচুর মতো সবজির দামের কোনো পরিবর্তন নেই। বরং পেঁপে ও কচুর লতির মতো সবজির দাম বেড়েছে। কাঁচা মরিচের দাম প্রতিদিন একটু কমা-বাড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শনিবার খুলনায় কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ১৬০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে অন্য বাজারের চেয়ে সব সবজির দামই বেশি রাখতে দেখা গেছে।

প্রায় সব ধরনের সবজির দামই প্রতি কেজি ৫০ টাকা বা তার বেশি। শনিবার খুলনার ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

মিস্ত্রিপাড়া ও শেখপাড়া—দুই বাজারেই প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম একটু বেশি, প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। তিন সপ্তাহ ধরে খুলনার বাজারে মুরগি এই দামেই বিক্রি হচ্ছে।

তবে মাছের দাম তিন-চার দিন ধরে কিছুটা পড়তির দিকে বলে জানান মাছ বিক্রেতারা। গতকাল ১ কেজি ওজনের রুইমাছ ২৮০ টাকা, দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের রুই ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তেলাপিয়া বড়টা ১৮০ টাকা এবং পাঙাশ বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে।

শেখপাড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. মাহবুব বলেন, ‘যে পরিমাণ মাছ গত সপ্তাহেও বিক্রি করেছি, এখন সেই পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হয়তো। আড়তেও মাছের দাম কিছুটা পড়ে গেছে। গত সপ্তাহের চেয়ে সব মাছই কেজিতে কম করে ৫০ টাকা কমেছে।’

মিস্ত্রিপাড়া কাঁচাবাজারে পণ্য কিনছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রেজওয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কম টাকা বেতনের চাকরি করি, এখন সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে। এক সপ্তাহে আগে ৫০ টাকায় আলু কিনেছি, এখন কিনতে হলো ৬০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেশি। খরচ বাঁচাতে সকালে একটু আলু বা কুমড়াভর্তা দিয়ে চালিয়ে নিতাম। তবে ভর্তার উপকরণ আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ বা কুমড়ার দাম যেভাবে বাড়ছে, সেটাও চালাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলু ও পেঁয়াজ খুলনার উৎপাদিত পণ্য না। এখানকার ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গ থেকে এসব পণ্য কিনে থাকেন। সেখানেই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আমরা চালান দেখেছি, খুলনার পাইকারি ক্রেতারা সেখান থেকে বেশি দামে পণ্য কিনছেন। এ কারণে এখানে তাঁদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যাঁরা চালান দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।’