উদ্বোধনের ৯ মাস পর চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে ৯ মাস পর পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। প্রাথমিকভাবে প্রাইভেট কার আর মাইক্রোবাস–জাতীয় গাড়ি চলছে। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে কবে নাগাদ গাড়ি চলবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সাময়িকভাবে যান চলাচল শুরু হলেও আপাতত বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে টোল দিতে হবে। তবে পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচলে কোনো টোল নেওয়া হচ্ছে না। এক্সপ্রেসেওয়ের র্যাম্পের (মূল উড়ালসড়ক থেকে ওঠানামার পথ) কাজ শেষ না হওয়ায় গাড়িগুলো নগরের লালখান বাজার থেকে সরাসরি পতেঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াত করছে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল মধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ এর উদ্বোধন করেছিলেন। ওই দিন সারা দেশে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য উপযোগী। এখন পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে গাড়ি চলাচলে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি কোনো সমস্যা পাওয়া যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা নিয়ে কাজ করা হবে।
তবে কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গভাবে গাড়ি চলাচল করবে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, গাড়ি চলাচলের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন। কেননা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে টোল দিতে হবে। আর টোলের হার চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। এক্সপ্রেসওয়ে যে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রয়েছে, তা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যখন অনুমোদন দেবে, তখনই পূর্ণাঙ্গভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। এ জন্য তাঁদের সব প্রস্তুতি রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের লালখান বাজার থেকে গাড়ি ওঠার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এই প্রান্তে গাড়ি নামছে টাইগারপাসে। আর পতেঙ্গা প্রান্তে গাড়ি ওঠানামা করছে।
প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চলাচলের সুযোগ থাকলেও মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরাও এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে চান। তবে তাঁদের এক্সপ্রেসওয়ে উঠতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তা প্রহরীরা।
সাত বছর আগে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা সময় বৃদ্ধি করে মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। এই সময়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। এখন আরেক দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করার জন্য আবেদন করেছে সংস্থাটি।
সিডিএ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত এপ্রিলে। তখন থেকে যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যায় এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু সড়কবাতি, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের কাজ বাকি থাকায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের সময় টোল আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র দিলেও সেখানেও টোল প্লাজার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। ছিল না সড়ক বাতি ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও। নির্মাণকাজের শেষ পর্যায়ে এসে গত বছরের এপ্রিলে এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ এবং টোল প্লাজা স্থাপনের জন্য দরপত্র দিয়েছিল। কিন্তু টোল প্লাজা স্থাপনের দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। টোল প্লাজার জন্য আবার নতুন করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে সিডিএ।
সিডিএর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন লিমিটেড। এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে টোল দিতে হবে ব্যবহারকারীদের। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে যাতায়াতে কারের জন্য ৫০ থেকে ৮০ টাকা প্রস্তাব করেছিল সিডিএ। তবে মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে ১০০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে সিডিএর প্রস্তাব ছিল ওঠানামার স্থান ভেদে ২৫০ ও ২৮০ টাকা। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে ৩০০ টাকা। কাভার্ড ভ্যানের জন্য সিডিএর প্রস্তাব ৪৫০ টাকা আর মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে ৫০০ টাকা।
মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনা সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের জন্য টোল ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ রাখার বিষয়ে আলোচনা হলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।