দ্রুত নির্বাচন দিয়ে আপনারা সম্মানের সহিত বিদায় নিন: লুৎফুজ্জামান বাবর

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় রেলস্টেশন সংলগ্ন মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি সামলাতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে আপনারা সম্মানের সহিত বিদায় নিন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।’

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় রেলস্টেশন সংলগ্ন মাঠে নিজের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লুৎফুজ্জামান বাবর এ কথা বলেন। মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে গত রোববার জেলা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গণসংবর্ধনা দেয় জেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার খালিয়াজুরিতে উপজেলা বিএনপি তাঁকে গণসংবর্ধনা দেয়।

আজ মোহনগঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলায় আমাকে দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর কারাগারে আটকে রেখেছিল। শুধু আমাকে কারাগারে রেখেছে তা–ই নয়, এই সময়ের মধ্যে পুরো দেশকেই কারাগারে পরিণত করেছিল। মানুষ এখন নিশ্বাস নিতে পারছে। আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মীদের যে কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি শুধু আল্লাহকে মনে-প্রাণে ডেকেছি। আপনাদের দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেছেন। তিনি (আল্লাহ) চাইলে সবই হয়। আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আমার এলাকার মানুষদের বুকে টেনে নিতে পারছি। এর চেয়ে আমার আর কিছু চাওয়া–পাওয়া নেই।’

লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা কখনো পাতানো এই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাইরে আপনারা কোনো কিছু চিন্তা করবেন না। ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রয়োজনে রাজপথে নামতে হবে।’ এ জন্য দলের নেতা-কর্মীদের তৈরি থাকতে বলেন তিনি।

লুৎফুজ্জামান বাবর আরও বলেন, ‘কারাগারে থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াতে চেয়েছিল। অনেক নির্যাতন করেছে। কিন্তু পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় নেই উল্লেখ করে বাবর বলেন, ‘অতীতে যেভাবে আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দিয়েছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, আমাদের দলের নেতা-কর্মীরাও নিরাপত্তা দেবে। আপনাদের কোনো ভয় নেই। আপনারা-আমরা সবাই এই দেশে জন্মেছি। আপনারা নিজেদের কখনো সংখ্যালঘু মনে করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেকারত্ব দূর করা হবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি করে সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম কার্নায়েন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব টিপু সুলতান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান, সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা মাসুদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান, মোহনগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মাসুম, সদস্যসচিব গোলাম রাব্বানী প্রমুখ।

লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। যার মধ্যে দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছিল। তবে সাম্প্রতিক রায়ের ফলে ধাপে ধাপে তিনি খালাস পান। পরে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। তারপর চিকিৎসা ও ওমরাহ পালন শেষে গত রোববার তিনি নেত্রকোনায় ফেরেন। ওই দিন জেলা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে গণসংবর্ধনা দেয় জেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার খালিয়াজুরিতে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। আজ মোহনগঞ্জে সংবর্ধিত হয়ে রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বলে জানা গেছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, ‘আমাদের নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর এই ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ। তাঁর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো, তিনি যখন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন তাঁর নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলায় বহু মানুষকে চাকরিসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য দলমত-নির্বিশেষে সবাই তাঁকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। অবিসংবাদিত এই নেতাকে আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যা-বানোয়াট মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে রেখেছিল। কিন্তু তিনি ন্যায়বিচার পেয়ে মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় ১৮ বছর পর তিনি এলাকায় আসায় প্রত্যেক মানুষ নেতাকে কাছে পেয়ে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।’