আ.লীগ প্রার্থীর জন্য বড় বাধা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহীনুল

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহীনুল হক
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাঁর পক্ষে মাঠে নামলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহীনুল হক ওরফে মার্শালের সঙ্গে আছেন তাঁর তিন ভাই। তিনজনই জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।

এ কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। এ পরিস্থিতিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে শাহীনুল হকের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ‘কঠোরতম’ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় শাহীনুল হক ওরফে মার্শাল ও নুরুল আবছারকে কয়েক দিন আগে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। মার্শাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং নুরুল আবছার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

শাহীনুল হকের তিন ভাই হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক ওরফে রাশেদ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক ওরফে সোহেল ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক ওরফে জুয়েল। তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এ কে এম মোজাম্মেল হকের সন্তান।

৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৃথক চিঠি পাঠান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কক্সবাজারের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা।

শেখ হাসিনাকে ‘আপা’ সম্বোধন করে লেখা চিঠিতে মোস্তাক আহমদ উল্লেখ করেন, তিন ভাই দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্শালের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছেন।

কালোটাকা খরচ করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাশেদ আওয়ামী লীগের একটি অংশকে নিয়ে, সোহেল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন যুবলীগের একটি অংশকে নিয়ে এবং জুয়েল জেলাজুড়ে মার্শালের পক্ষে ভোটের মাঠে আছেন। এ কারণে জেলা আওয়ামী লীগ পরিবার বিভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছে। মার্শালের তিন ভাই বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত নোংরা ভাষায় তাঁকে (মোস্তাক আহমদ) ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমাকে  গালাগাল করছেন।

তিন ভাইকে থামানো না গেলে তাঁর জয় কঠিন হয়ে পড়বে উল্লেখ করে মোস্তাক আহমদ চিঠিতে আরও লেখেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি মোজাম্মেল পরিবারের ‘নোংরামি ও বিরোধিতা’র কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটে, তাহলে শেখ হাসিনাকেই অসম্মান করা হবে। তাঁর (মোস্তাক আহমদ) সারা জীবনের অর্জনও নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁকে জয়ী করে আনতে হলে একমাত্র সমাধান হলো মার্শালের তিন ভাইকে থামানো এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

চিঠির প্রসঙ্গে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্শাল অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ করছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের টাকার উৎস খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁর ভাইদের নোংরামির বিষয়গুলো দলীয় সভানেত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা চালানো ও কালোটাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহীনুল হক ওরফে মার্শাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তার জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় গিয়ে যেহেতু প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। তাই নিরাপত্তার জন্য এটা (অস্ত্র) সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য খরচের যে সীমা রয়েছে, সেটার মধ্যে থেকেই খরচ করছি। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পরিবার সম্পর্কে ধারণা রাখেন। মোস্তাক আহমদ চৌধুরী দলীয় প্রার্থী হলেও তাঁর প্রতীক নৌকা নয়। আমরা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মাঠে নেমেছি। এতে দলের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।’

শাহীনুল হকের ছোট ভাই কায়সারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে লাল কার্ড দেখাচ্ছেন ভোটাররা। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাজে প্রলাপ বকছেন তিনি। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষেই আছি। তবে এটা স্থানীয় নির্বাচন।’

১২ অক্টোবর পর্যন্ত দলীয় প্রধানকে পাঠানো মোস্তাক আহমদের চিঠির জবাব বা কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল (১৫ অক্টোবর) কক্সবাজারে সাংগঠনিক সফরে আসছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তখন এ বিষয়ে আলোচনা হবে।

১৭ অক্টোবর এ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন প্রার্থী। তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনের ১১ জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে লড়ছেন ৩৩ জন প্রার্থী। ভোটার ৯৯৫ জন।