রংপুর নগরের এক কিলোমিটার সড়কে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য

লালবাগ থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার্কের মোড় হয়ে মডার্ন মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ।

রংপুর জেলার মানচিত্র

রংপুর শহরের লালবাগ থেকে মডার্ন মোড় এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটিতে ছিনতাই থামছে না। এই সড়কে অপহরণ করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। এর আগে দুর্বৃত্তদের হাতে অনেকেই আহত হওয়ার পাশাপাশি ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এক কিলোমিটারে এক মাসে ১৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অভিযানে অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও ছিনতাই বন্ধ হয়নি। এক সপ্তাহ আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। ছিনতাই বন্ধ না হওয়ায় ওই সড়কে চলাচলকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ওই সড়কে ছিনতাইয়ের বিষয়ে তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এই থানায় যোগদানের আড়াই মাসে ওই সড়কে মাত্র একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই সড়কে সব সময় পুলিশ টহলে থাকে।’

গত ৩০ মার্চ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ার রহমান (২১) রাত নয়টার দিকে কারমাইকেল কলেজের সামনে নগরের লালবাগ এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। এই সময় চার ছিনতাইকারী ওই অটোরিকশায় উঠে তাঁকে ও চালককে জিম্মি করে ফেলেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তাঁরা তাঁকে প্রেসক্লাবের সামনে নামিয়ে দেন।

কারমাইকেল কলেজের প্রবেশপথ শহরের লালবাগ থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার্কের মোড় হয়ে মডার্ন মোড় পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার সড়কের কিছু স্থান নির্জন এলাকা। সড়কের দুই পাশে খালি জায়গা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ। কিছু এলাকায় অল্প বাসাবাড়ি কিংবা শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য আবাসিক মেস থাকলেও প্রধান সড়ক থেকে কিছুটা দূরে। দুটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একমাত্র এই সড়ক চলাচল করতে হয়।

গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ছিনতাইয়ের শিকার দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী গত ২৮ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে হেঁটে মেসে যাচ্ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বললেন, ‘কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের পাশের নির্জন জায়গা থেকে দুজন যুবক ছুটে এসে পথ রোধ করেন। তখন আমার কাছে থাকা সামান্য টাকা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দিয়ে দিই। কেননা, চিৎকার করলে আঘাত করতে পারে, এই ভয়ে চিৎকারও করিনি।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ প্রায়ই এই সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ঘটনা প্রচার করেন না ভুক্তভোগীরা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন থেমে থাকার পর আবারও এই পথে নতুন করে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুরু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কাও ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি পুলিশকে গুরুত্বসহকারে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী অপহরণ করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১ এপ্রিল তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত রংপুর নগরের বালাপাড়া এলাকার শাকিব আহম্মেদ, একই এলাকার শাকিল আহমেদ, নগরের তাজহাট সূত্রাপুর মনির হোসেন ওরফে সুমন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন আরও গুরুত্বসহকারে ওই সড়কসহ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের আশপাশের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

 উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ওই সড়কের বিএডিসির কার্যালয়ের সামনে ছিনতাইকারীদের হাতে একটি ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী খুনের ঘটনাও ঘটেছে। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলে অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনা থানায় অভিযোগ করা হয় না।