পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে ভাঙন, স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষাবাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে দিন যাপন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকালে আলম খারকান্দি এলাকায়ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটারের মতো অংশ পদ্মায় ধসে পড়েছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ৩টি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার। ভাঙনের আতঙ্কে এরই মধ্যে ২টি গ্রাম থেকে ১৩টি বসতঘর ও ২টি দোকানঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, এমন ভাঙনের কারণ পদ্মা নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি পাওয়া।

আগামীকাল বুধবার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন সরকারের তিনজন উপদেষ্টা। তাঁরা হলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের সঙ্গেই পরবর্তী সময়ে নদী শাসনের বাঁধ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

গত বছরের নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ওই বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর গত শনিবার সকালে আবার বাঁধের ২০০ মিটারের মতো অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বাঁধের অংশ ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জাজিরার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার। তাঁদের মধ্যে আলম খার কান্দি গ্রামের অন্তত ১৫ জন তাঁদের ১৩টি বসতঘর ও ২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়ে গেছেন।

আলম খার কান্দি এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ তালুকদার একটি মুদিদোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তিনি দোকানঘরটি ওই স্থান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। প্রথম আলোকে মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘ভাঙন শুরু হওয়ায় আমার দোকানটি সরিয়ে নিতে হয়েছে। বসতবাড়িটিও এখন নদীর তীরে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি, কখন আমাদের শেষ সম্বল বাড়িটি পদ্মায় গ্রাস করে।’

সবুজ ব্যাপারীর বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায়। ২০১৯ সালে ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয় পদ্মায়। আশ্রয়হীন হয়ে তিনি জাজিরায় আলম খার কান্দিতে আশ্রয় নেন। সেই স্থানও ভাঙনের কবলে পড়েছে। সবুজ ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা নদীর ভাঙন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। এখানে এসে বসবাস শুরু করে বাঁধের কারণে নিরাপদ বোধ করছিলাম। এখন সেই বাঁধও ভাঙনের কবলে পড়ায় আমরা গৃহহারা হলাম। জানি না, এখন কোথায় আশ্রয় নেব।’

বাঁধের কিছু অংশে ভাঙনের কারণে এলাকার মানুষের মনে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে জানান জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায়। তিনি বলেন, আতঙ্কিত মানুষদের কয়েকজন নিরাপদ স্থানে তাঁদের ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা সহায়তা চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

পাউবোর শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধটির কিছু অংশে সংস্কার চলছিল। নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় উজানের দিকে কিছু অংশ আবার ভেঙেছে। ভাঙন ঠেকাতে গত রোববার থেকে সেই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।