নেত্রকোনায় এসআইকে কুপিয়ে হত্যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত, মামলা দায়ের
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি কোপে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম (৪৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে নিহত পুলিশের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় শোক, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দিয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। নিহত শফিকুল দুর্গাপুরের চণ্ডীগড় ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি জামালপুর পুলিশ লাইনসের বেতার বিভাগে এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম ছুটি নিয়ে গত বুধবার বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হন। সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে পানমহাল রোড এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সর্বশেষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
হত্যার ঘটনায় নিহত শফিকুলের বাবা গতকাল সকালে বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ছয়জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। হত্যা–সংক্রান্ত একটি সিসিটিভির ফুটেজ গতকাল দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শফিকুল ইসলাম প্যান্ট ও শীতের পোশাক পরে পানমহাল রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এ সময় আকস্মিকভাবে তিনজন যুবক লম্বা দা দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছেন। ওই যুবকদের মধ্যে একজনের মাথায় টুপি রয়েছে। তিনজনই জ্যাকেট পরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানমহাল রোড এলাকার একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে দেখেন কয়েকজন দুর্বৃত্ত শফিকুলকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে দেখে পালিয়ে যান। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে অনেক পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। কয়েকজন মিলে আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অন্ধকার থাকায় কাউকে চেনা যায়নি।
শফিকুলের স্ত্রী স্কুলশিক্ষক রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘কেন এমন হলো, কারা আমার স্বামীকে হত্যা করল আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল বলেও আমাদের জানা নেই। আমার স্বামীকে তো আর ফিরে পাব না, কিন্তু আমি জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে তাঁদের ফাঁসি চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত করেছি। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও একজন পুলিশ সদস্যকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সব পুলিশ সদস্য গভীর শোকাহত ও মর্মাহত হয়েছে।
পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় সহকর্মী এসআই (নি.) মো. শফিকুল ইসলাম, যিনি জামালপুর পুলিশ লাইনসের বেতার বিভাগে কর্মরত ছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ, সাহসী এবং নির্ভীক সহকর্মীকে হারালাম, যা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কর্মজীবনের অবদান এবং মানবিক গুণাবলির স্মৃতি আমাদের মনে চিরকাল অম্লান থাকবে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীর বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’