ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানববন্ধন

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এজাজ আহমেদের অনুসারীরা দাবি করেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরই উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন এই নির্বাচনে এজাজ আহমেদকে বেকায়দায় ফেলতে তাঁর প্রতিপক্ষ এমন ‘নাটক’ সাজিয়েছে। মানববন্ধন থেকে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন অভিযোগকারী তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় ‘ভাই’ পরিচয় দানকারী গোলাম রসুল। বক্তব্যে তিনি বলেন, গতবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ারের নির্দেশনায় তিনি ওই তরুণীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন

এজাজ আহমেদ খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাবা গাজী আবদুল হাদী ওই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ২০১৭ সালের নভেম্বরে মারা যান আবদুল হাদী। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে তাঁর ছেলে এজাজ আহমেদ নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তাঁর পক্ষে কাজ করেছিল।

দুপুরে মুঠোফোনে এজাজ আহমেদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একটি চক্র আমাকে বিভিন্ন সময় বিপাকে ফেলার চেষ্টা করে আসছে। নির্বাচন সামনে রেখে সেই চক্রটি এমন নাটক সাজিয়েছে। আমি ওই মেয়েকে কোনোভাবেই চিনি না।’

মোস্তফা সরোয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে এজাজ আহমেদ বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলার মানুষের কাছে এখন ব্যাপারটি বেশ পরিষ্কার। তাঁরা জানেন, এ ঘটনার পেছনের নেপথ্যে নায়ক হিসেবে কে কাজ করেছেন। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তির সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’

আরও পড়ুন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোস্তফা সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মেয়েটির ভাই পরিচয়ে একজন ফোনে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, আমি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি নিজেই একজন সাংবাদিক ও দুবার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। আমার কাছে যে কেউ পরামর্শের জন্য আসতেই পারেন। এর সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে একজন ব্যক্তির অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাজনীতিকে পুঁজি করা হচ্ছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তাফা কামাল ওরফে খোকন বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা হয়েও আজকের মানববন্ধন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মোস্তাফা কামাল আরও বলেন, ‘কোনো কিছু না ঘটলে একটি মেয়ে স্বেচ্ছায় ধর্ষণের কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হবে না। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যদি জড়িত না–ই থাকবেন, তাহলে কেন তাঁর ভাইয়েরা ওই মেয়েকে হাসপাতাল থেকে ছিনতাই (অপহরণ) করে নিয়ে যাবেন। আসল ঘটনা কোনটি, তা একমাত্র উদ্‌ঘাটন করতে পারে পুলিশ। কিন্তু সেই পুলিশই রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।’

খোঁজ মেলেনি সেই তরুণীর

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা সেই তরুণী ও তাঁর মায়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁরা এখনো বাড়িতে যাননি। স্বজনেরাও জানেন না, ওই তরুণী ও তাঁর মা কোথায় আছেন।

তরুণীর মামাতো ভাই বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ধর্ষণের অভিযোগ করা সেই তরুণী কোথায় আছে জানতে চাইলে এজাজ আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু আমি তাঁকে চিনি না, তাই সে কোথায় আছে তা আমি জানি না। তবে শুনেছিলাম, তারা নাকি বাড়ি চলে গিয়েছিল। তারা যদি বাড়ি না যায়, তাহলে কোথায় আছে তা বলতে পারব না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই তরুণী ও তাঁর মা নিখোঁজ, সে ব্যাপারে তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। এই প্রতিবেদকের কাছ থেকেই তিনি প্রথম এ কথা শুনছেন।

গত শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন এক তরুণী (২৮)। তিনি ও তাঁর ভাই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি চিকিৎসকদের কাছে জানান, সেদিন সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে অবস্থিত ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। রোববার সকালে ওই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। পরে বিকেলের দিকে হাসপাতাল চত্বর থেকে ওই তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়।