কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ৮৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন

ভবন করার দাবি জানিয়েছে।

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

কোথাও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। কোথাও জানালা ভাঙা। তার ওপর একটি ভবন পরিত্যক্ত। এমন দুরবস্থা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের ছুপুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

শুধু ছুপুয়া বিদ্যালয় নয়, উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৯টি ভবনই জরাজীর্ণ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন ভবন করার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভবন সংস্কারেরও দাবি জানান।

উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্যমতে, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৪৬টি বিদ্যালয়ের ১০৩টি ভবনের ৪৫টি জরাজীর্ণ ও ৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ। ৪৬ বিদ্যালয়ের ১৪টি ভবন ব্যবহার উপযোগী। এগুলোতে ২৩৫টি শ্রেণিকক্ষের বিপরীতে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ আছে ১৩৮টি।

উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, কাদবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করপাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুজকরা পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঘুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদ্রা উষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীহাস্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়ুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উল্লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছুপুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুয়া সুহূদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদ্রা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোড়াময়দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদুয়া শহীদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরকট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মেরকট লুধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুড়িয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টি সাহেব বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেসাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

কাদবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল জান্নাত বলেন, স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে আমরা টিনসেডের ভবন করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি।

ঝাটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের পূর্বাংশের ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী ভবনটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। টুয়া সুহূদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটির দরজা-জানালা নেই। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। অন্য ভবনের দুই কক্ষে পাঠদান চলে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘অনেক বিদ্যালয়ে একাধিক ভবন নেই। আবার অনেক বিদ্যালয়ে মাত্র একটি ভবন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের উপযোগী রয়েছে। আমরা নিয়মিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা প্রেরণ করছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে সেগুলো নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।