স্ত্রীকে হত্যার পরদিন এসে শৌচাগারে লাশ লুকিয়ে রাখেন স্বামী: পুলিশ

গৃহবধূ কুলছুম হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানায় পুলিশ। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার সামনে
ছবি: প্রথম আলো।

ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেম, তারপর বিয়ে। পাঁচ মাসের মাথায় লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে না পেয়ে স্ত্রী রহিমা আক্তার সুমির (১৮) গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন আবু ইউছুফ (২২)। মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি ভাড়া বাসার দরজার বাইরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন আবার বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ শৌচাগারে লুকিয়ে রেখে দরজা লাগিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আবু ইউছুফ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয় স্বীকার করেছেন। তাঁর বরাত দিয়ে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, চাটখিল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাস ও সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল শনিবার সাতক্ষীরা শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আবু ইউছুফকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে গতকাল রাতে সোনাইমুড়ী থানায় নেওয়া হয়। আবু ইউছুফ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলেনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আবু ইউছুফ একজন পেশাদার চোর। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের মুঠোফোন চুরি করতেন। ফেসবুকের মাধ্যমে নোয়াখালীর চাটখিলের তরুণী রহিমা আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় ইউছুফের। পরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত এপ্রিল মাসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান রহিমা আক্তার। দুই দিন পর বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি কুমিল্লা আছেন, ভালো আছেন। চার-পাঁচ মাস আগে রহিমা আক্তারকে নিয়ে ইউছুফ চাটখিলের গ্রামের বাড়িতে আসেন। সেখানে দুই পরিবারের সম্মতিতে দুজনের বিয়ে দেওয়া হয়।

ইউছুফের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলেনে বলা হয়, গত মাসে ইউছুফ সোনাইমুড়ী পৌর শহরের দুশ্চিম পাড়া পৌরসভা এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ১ অক্টোবর সকালে ইউছুফ বিদেশে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। কিন্তু স্ত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় রহিমার নাকেমুখে থাপ্পড় মারেন ইউছুফ। এতে রহিমার নাক-মুখ দিয়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। পরে রহিমার গলায় থাকা ওড়না পেছন থেকে পেঁচিয়ে ধরে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ইউছুফ।

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ইউছুফ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ওই দিন মেঝেতে লাশ ফেলে বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঢাকায় চলে যান। পরদিন তিনি আবার বাসায় আসেন এবং স্ত্রীর লাশ টেনেহিঁচড়ে শৌচাগারে লুকিয়ে রাখেন। শৌচাগারের দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে সাতক্ষীরা পালিয়ে যান। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে ৯টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।