ফরিদপুরে দুদকের বিরুদ্ধে তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতার

ঈশান গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সহিদুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলন। আজ বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে দুদকের বিরুদ্ধে একটি মামলার তদন্তকাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাঁর অভিযোগ তুলে ধরেন।

ওই নেতার নাম মো. সহিদুল ইসলাম ওরফে মজনু। তিনি ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

লিখিত বক্তব্যে সহিদুল ইসলাম বলেন, ঈশান গোপালপুরের প্রয়াত জমিদার ঈশান চন্দ্র সরকারের তিন ছেলে। তাঁরা পাকিস্তান আমলে ভারতে চলে যাওয়ার পর জমিদার ঈশান চন্দ্রের সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু সম্পত্তি সম্প্রতি ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে বিক্রি করেন পাঁচ ব্যক্তি। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজশে মৃত খগেন্দ্রনাথ সরকারের তিন ছেলে উজ্জ্বল সরকার (৪০), উৎপল সরকার (৩৮), উত্তম সরকার (৩৫) ও খগেন্দ্রনাথের স্ত্রী লিপিকা সরকারের নামে ওই ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করা হয়।

তদন্তের কাজ শেষ হতে দুই বছর কিংবা তিন বছরও লেগে যেতে পারে। যিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁর কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি আদালতে জানাতে পারতেন। তা না করে চলমান মামলা বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি প্রকারান্তরে আদালত অবমাননা করেছেন।
রেজাউল করিম, উপপরিচালক, দুদক সমন্বিত ফরিদপুর কার্যালয়

সরকারি এ সম্পত্তি রক্ষায় ফরিদপুরের বিশেষ জেলা জজ আদালতে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর ওই পাঁচজনের নামে একটি মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুল। আদালত এ মামলাটি তদন্তের জন্য দুদক ফরিদপুরকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দুদক আজ পর্যন্ত এ মামলার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি।

সহিদুল ইসলামের অভিযোগ, দুদক আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে, প্ররোচিত হয়ে এবং অন্যায় লাভে লাভবান হয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। দুদকের এ কর্মকাণ্ডের ফলে এই নালিশি মামলার ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মামলার বাদী সহিদুল ইসলাম তদন্তকারী সংস্থা দুদক ফরিদপুরের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানান। তিনি এ অভিযোগের অনুলিপি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক এবং দুদক সমন্বিত কার্যালয় ফরিদপুরের উপপরিচালককে দিয়েছেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদক সমন্বিত ফরিদপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশে দুদক তদন্ত করছে। তদন্ত চলমান আছে। তদন্তের কাজ শেষ হতে দুই বছর কিংবা তিন বছরও লেগে যেতে পারে। যিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁর কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি আদালতে জানাতে পারতেন। জানাতে পারতেন দুদককেও। তা না করে চলমান মামলা বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি প্রকারান্তরে আদালত অবমাননা করেছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে কথা হয়েছে উজ্জ্বল সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সহিদুল ইসলাম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ‘মনগড়া গল্প ফেঁদে এ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। জমিদার ঈশান চন্দ্র সরকারের ওয়ারিশ হিসেবে অনেকগুলো মামলা অতিক্রম করে আমাদের পক্ষে রায় আসার পর ফরিদপুরের এসিল্যান্ড আমাদের নামে সম্পত্তির নাম জারি করেছেন। এখানে জাল-জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।’