উন্নয়ন হলেও দূর হয়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা  

ময়লার দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের সপুরা মিলপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এমন কোনো বর্জ্য নেই, যা সড়কটির পাশে ফেলা হয়নি। যদিও সেখানে ময়লা না ফেলার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কের পাশের দেয়ালে একটি নোটিশও দেওয়া রয়েছে। এরপরও করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সেখানেই ময়লা ফেলছেন। আর এলাকাবাসীকে নাক চেপে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। 

এটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি সড়ক। ওয়ার্ডের মিলপাড়ায় টিটিসির (কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) দেয়াল ঘেঁষে এই বর্জ্য ফেলা হয়। গত ২৮ এপ্রিল ওই সড়কে গিয়ে আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। এ সম্পর্কে স্থানীয় কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ বলেন, ময়লা ফেলার জন্য নগরের বিসিক এলাকার মধ্যে একটি পয়েন্ট সিটি করপোরেশন থেকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ওই জায়গা বর্জ্য ফেলতে বারণ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সেখানে একটি নোটিশ লাগানো হবে।

তবে গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়েও ওই সড়কের পাশে একইভাবে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে ময়লার ফেলার জন্য টিটিসির দেয়ালে সিটি করপোরেশনের একটি নোটিশ দেখা যায়।

 হানিফ টিপু নামের এক চালক অটোরিকশা নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ছবি তুলতে দেখে তিনি গাড়ি থামিয়ে বললেন, এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা যায় না। সিটি করপোরেশন ময়লা ফেলার জন্য জায়গা করে দিয়েছে। এরপরও সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা এখানেই ময়লা ফেলেন। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছোট বাচ্চারা বমি করে দেয়। গাড়ি নষ্ট হলেও তারা এখানে দাঁড়াতে চায় না। সারা দিন মানুষকে ভুগতে হয়।

তা ছাড়া এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আরেকটি অভিযোগ, মহল্লা থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রতিদিন ময়লা নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা একদিন বা দুই দিন পর পর নেন। এতে বাড়িতেই ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছাড়াতে শুরু করে। 

কাউন্সিলর বেলাল আহাম্মেদের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, কয়েকটি রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে, কার্পেটিং হয়নি। তা ছাড়া এই ওয়ার্ডে ভালো উন্নয়ন হয়েছে। তবে একজন বললেন, এই এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। বিদ্যুৎও সব সময় থাকে না। একজন বললেন, রাতে মাদকের আড্ডাও বসে। 

এই ওয়ার্ড থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ্ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহাম্মেদ। এবারও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তিনি ছাড়াও এই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মনতাজ আহাম্মেদ, বিএনপি কর্মী রাহুল হোসেন ওরফে রনি ও রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সহসম্পাদক আজিম শেখ।

কাউন্সিলর পদে এলাকার মানুষ আবারও কেন আপনাকে ভোট দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল আহাম্মেদ বলেন, তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এই মেয়াদের তিনি প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকার কাজ করেছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাস্তাঘাটের যে কাজ করার কথা ছিল, তার প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। একটি কবরস্থান ও একটি খেলার মাঠের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কবরস্থানের কাজটিও শুরু করা হয়েছে। এখন মাঠের বিষয়টি হয়নি। এটা করতে হলে একটি ফাঁকা জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হলে তিনি এটা করে ফেলবেন। 

বেলাল আহাম্মেদ আরও বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা আর থাকবে না। অভ্যাসবশত কেউ কেউ রাস্তার ধারে ফেলেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ ভালোবেসে তাঁকে চারবার নির্বাচিত করেছেন। পঞ্চমবারের মতো তিনি নির্বাচিত হবেন। 

আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মনতাজ আহাম্মেদ বলেন, তিনি ২০১৩ সালে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। এবার তিনি আশা করছেন জনগণ তাঁকে নির্বাচিত করবেন। বর্তমান কাউন্সিলরের অধীনে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। এরপরও কেন তাঁকে জনগণ ভোট দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উন্নয়ন করেছেন মেয়র। তিনি সব ওয়ার্ডেই সমানভাবে উন্নয়ন করেছেন। এই কৃতিত্বের দাবিদার কাউন্সিলর নন। সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া ত্রাণের বস্তা নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে তো কিছু করেননি। 

যুবলীগ নেতা আজিম শেখ বললেন, তিনি নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করেছেন। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বর্তমান কাউন্সিলর কিছুই করেননি। শুধু নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্য কাজ করেছেন। কর্মসংস্থান করা কি কাউন্সিলরের কাজ, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি না হোক, বিসিকে তো কারখানার মালিকদের বলে কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। তিনি নির্বাচিত হলে সেটাই করবেন।

বিএনপি কর্মী রাহুল হোসেন ওরফে রনি বলেন, তিনি রাজশাহী বিল্ডিং পেইন্টার শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কাছে এলাকার মানুষ আকাঙ্ক্ষার কথা জানান। মানুষের প্রত্যাশার কারণে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।