নানা পশুপাখির ডাক ডেকে শিশুদের আনন্দ দেন বারেক
কোকিল, টিয়া, ঘুঘু, ময়না, কুকুর, বিড়াল, মোরগ, মুরগি, শিয়াল, ব্যাঙসহ ১৫ থেকে ২০ ধরনের পশুপাখির ডাক জানেন তিনি। সাত থেকে আট রকম করে হাঁটতে পারেন। কেউ চাইলে ততক্ষণাৎ কেঁদে দেখাতে পারেন। আবার কারও হাসি বা কথা নকল করা তাঁর কাছে কঠিন কিছু নয়। শিশু–কিশোরেরা তাই তাঁকে খুব পছন্দ করে। নানা কিছু করে দেখানোর জন্য আবদার করে।
এই ব্যক্তির নাম আবদুল বারেক। বয়স ৬০ বছরের বেশি। পেশায় ভিক্ষুক। বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার হাইলজোড় গ্রামে। হাসিখুশি বারেক প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের মেঠোপথে। মানুষের বাড়ি ভিক্ষা করতে গিয়ে শিশু-কিশোরদের বিভিন্নভাবে আনন্দ দেন তিনি। আর শিশুরাও মজা পেয়ে ছোটে তাঁর পিছু পিছু।
সম্প্রতি এক সকালে কাপাসিয়া উপজেলার ভুলেশ্বর গ্রামে দেখা হয় আবদুল বারেকের সঙ্গে। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের কয়েকজন শিশু-কিশোর। শিশুরা বারেকের কাছে বিভিন্ন পাখির ডাক শোনার আবদার করছে। বারেকও তাদের কথামতো শুনিয়ে যাচ্ছে ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ বিভিন্ন পশুপাখির ডাক। বারেক আর শিশুদের উচ্ছ্বাসে তৈরি হয়েছে এক আনন্দঘন পরিবেশ।
গল্প হয় বারেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন পশুপাখির ডাক রপ্ত করেছেন। বিভিন্নজনের হাঁটা নকল করে দেখান। এসব দেখে আনন্দ পায় শিশুরা। তা ছাড়া তাঁরও ভালো সময় কাটে। আর এসব কারণে উপজেলার হাইলজোর, দরদরিয়া, ভুলেশ্বর, বালুচড়াসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামে তিনি বেশ পরিচিত মানুষ।
এসব শিখলেন কীভাবে—জানতে চাইল বারেক বলেন, ছোটবেলা থেকেই কোনো পশুপাখির ডাক শুনলে মনে গেঁথে যেত। টিভি দেখে বা আশপাশে মানুষকে হাঁটতে দেখে তিনি নকল করতে করতে শিখে যান। বললেন, ‘শিশুরা আমারে দেখলেই কাছে আসে। আবদার করে। আমিও তাদের মজা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
আবদুল বারেক যে শুধু শিশুদের কাছে আনন্দের মানুষ, এমন নয়। চায়ের দোকান, চার রাস্তার মোড় কিংবা বাজারে তাঁকে দেখলে মানুষ ঘিরে ধরেন। তাঁর সঙ্গে কৌতুক আর খোশ গল্প করেন।
কথা প্রসঙ্গে স্থানীয় ভুলেশ্বর-বালুচড়া মোড়ের দোকানি মো. রুবেল বলেন, বারেক ভিক্ষুক হলেও তাঁকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ অনেক। তাঁর প্রতিভা সবাইকে মুগ্ধ করে। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনিও তাঁর কাছে নানা আবদার করতেন বলে জানান।