ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা, কয়রায় বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধ উপচে কিংবা ভেঙে লোনাপানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে। আজ রোববার খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় আজ রোববার ভোর থেকে থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা ১১টার পর তা ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে। ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আবার কখনো রোদের দেখা মিলছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যা বা মধ্যরাত নাগাদ মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৮–১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এলাকা পেরিয়ে যেতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে।

আজ সকালে কয়রার কপোতাক্ষ নদের পারের মদিনাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির বহু মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে বেড়িবাঁধের রাস্তায় ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানলে গ্রামের সামনের ছোট্ট নিচু বেড়িবাঁধটি উপচে কিংবা ভেঙে লোনাপানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে। এ সময় দেখা যায়, অনেকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে ঘরবাড়ি বেঁধে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছেন।

মদিনাবাদ গ্রামের নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। সত্যি সত্যি যদি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদীতে ৮-১০ ফুট পানি বাড়ে, তবে পুরো এলাকা লবণপানিতে ভেসে যাবে। তলিয়ে যাবে মাছের ঘের। কয়রার মানুষ ঝড় নিয়ে খুব বেশি ভয় পায় না; ভয় পায় বাঁধ নিয়ে। আজ দুপুর আর মধ্যরাতে নদীতে জোয়ার হবে। তখন পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন
লাল পতাকা ঝুলিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। আজ রোববার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে
ছবি: প্রথম

এলাকাবাসী ও পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়রা সদর ইউনিয়ন, মহারাজপুর ইউনিয়ন, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি বাড়লে এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা আছে।

এ বিষয়ে খুলনা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বস্তির কথা হলো গতকাল মধ্যরাতের জোয়ারে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বাড়লেও কোথাও বাঁধ ভাঙেনি কিংবা বাঁধ উপচে পানি ভেতরে ঢোকেনি। তবে আজ জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করলে অতিরিক্ত জোয়ারে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১৬ হাজারের মতো বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে বস্তা পাঠিয়ে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করা হবে।’

আরও পড়ুন
১২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। কয়রা উপজেলাজুড়ে ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবন, পাকা ও নিরাপদ স্থাপনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়ের জন্য।

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে থেমে থেমে দমকা বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝড়টি সুন্দরবন উপকূলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। আজ বিকেল তিনটার দিকে রিমালের অগ্রভাগ সুন্দরবন নিকটবর্তী উপকূল দিয়ে অতিক্রম করা শুরু করবে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদও ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে।

হাসানুল বান্না আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ সন্ধ্যার দিকে উপকূল অতিক্রম করলে সেই সময় নদ–নদীতে ভাটা থাকবে। তাই জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কম হতে পারে। তবে বেশি রাতের দিকে উপকূল অতিক্রম করলে জলোচ্ছ্বাস বড় আকারে হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন, সিপিপিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ১২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। কয়রা উপজেলাজুড়ে ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবন, পাকা ও নিরাপদ স্থাপনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়ের জন্য। পাশাপাশি ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানা-পুলিশদের নিয়ে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। নিরাপদ পানি ও খাদ্য মজুত করা হয়েছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।