বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার 

সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি সিলিন্ডার জেলার কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।

মানিকগঞ্জে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি সিলিন্ডার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল দুপুরে জেলা শহরের জয়রা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে গ্রাহকেরা গ্যাস পাচ্ছেন না। ক্রেতাদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ১২ কেজির সিলিন্ডার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে এই সিলিন্ডারের দাম আরও বেশি রাখা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকার গ্যাস বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১২ কেজিতে ২৪৪ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ২ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থেকে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ১৭৮ টাকা, যা মার্চে ছিল ১ হাজার ৪২২ টাকা। তবে সরকার নির্ধারিত এই দামে এলপিজি গ্যাস মানিকগঞ্জের কোথাও বিক্রি হচ্ছে না।

জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়ার বেউথা সড়কের বাসিন্দা আরশেদ আলী বলেন, তিতাস লাইনের গ্যাস না পেলেও বিল দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে বাসাবাড়িতে জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনাও তোয়াক্কা করছেন না। আমরা পরিস্থিতির শিকার। এ অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’

মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জয়রা এলাকার এলাকার গ্যাস বিক্রেতা মেসার্স খোরশেদ আলম অ্যান্ড সন্সের পরিচালক শরীফুল ইসলাম বলেন, কোম্পানিগুলো থেকেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে গ্যাস কিনতে হয়। এ কারণে কোম্পানিগুলো থেকে যে দরে গ্যাস কিনতে হয়, তা থেকে পাইকার ক্রেতাদের কাছে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে গ্যাস বিক্রি করছেন। বর্তমানে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের জন্য পাইকারি দরে ১ হাজার ২৪০ টাকা দাম নিচ্ছেন বলে জানান শরীফুল। বেশি দাম নেওয়ার জন্য খুচরা বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের অতিরিক্ত দামের জন্য আমরা দায়ী নই। কোম্পানিগুলো বেশি দামে গ্যাসে বিক্রি করেন। এ ছাড়া খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে গ্রাহকদের কাছে আরও বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করে আসছেন।’

গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার বেউথা, পশ্চিম দাশড়া, উত্তর সেওতা, পশ্চিম সেওতা, মানরা ও জয়রা এলাকা এবং সদর উপজেলার দিঘী গ্রামে ঘুরে সিলিন্ডার বেশি দামে বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। পশ্চিম সেওতা এলাকার শাহাদাত ভ্যারাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী ও খুচরা গ্যাসবিক্রেতা আব্বাস আলী বলেন, ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বাড়তি দামে তাঁকেও গ্যাস বিক্রি করতে হয়।

বেউথা এলাকায় মেসার্স লিটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আরিফুল হক একটি কোম্পানির গ্যাসের ডিলার। গতকাল দুপুরে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরাই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস কিনতে পারছি না। তাহলে খুচরা পর্যায়ে কীভাবে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করব? আমাদের যদি প্রতি সিলিন্ডার ১ হাজার ১৯০ টাকায় কিনতে হয়, সেই সিলিন্ডার খুচরা দোকানে পৌঁছে দিতে ১ হাজার ২৩০ টাকা খরচ হয়। আমাদের তো অন্তত ২০ টাকা লাভ করতে হবে। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দামে গ্রাহকেরা গ্যাস কিনতে পারছেন না।’

এদিকে গ্রামপর্যায়ে গ্রাহকদের আরও বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জ শহরের অদূরে সদর উপজেলার দিঘী মাঝিপাড়া গ্রামের খুচরা বিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, সাব-ডিলারের কাছ থেকে ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ২৫০ টাকায় কিনতে হয় তাঁকে। ৫০ টাকা লাভে গ্রাহকদের কাছে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন। আর গ্রাহকদের বাড়ি পৌঁছে দিলে আরও ৫০ টাকা বেশি অর্থাৎ ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেন।

সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি না করার বিষয়ে কথা হয় কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি গোলাম ছারোয়ারের সঙ্গে। এ জেলায় এমনিতে তিতাস গ্যাসের লাইনে গ্যাস না পেলেও গ্রাহকদের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার ওপর সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়তি রাখায় ভোক্তারা (গ্রাহক) চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, কোম্পানিগুলো থেকেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিলারদের কাছে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে।