চুরির সময় দেখে ফেলায় মা-ছেলেকে হত্যা, তিনজন গ্রেপ্তার

পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রবাসীর স্ত্রী এবং তাঁর শিশুকে হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার চাটমোহরের দিঘুলিয়া গ্রামে মালয়েশিয়াপ্রবাসীর স্ত্রী লাবনী খাতুন (৩৫) ও তাঁর ছেলে রিয়াদ হোসেনকে (৮) হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, চুরির সময় দেখে ফেলায় এবং চেঁচামেচি করায় তাঁদের হত্যা করা হয়। ঘটনায় সরাসরি জড়িত অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের কাছ থেকে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চাটমোহর উপজেলার ধুপুলিয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৬), তাঁর বড় ভাই হোসেন আলী (৩৭) ও রাজবাড়ী জেলার খানখানাপুর দত্তপাড়া গ্রামের হুমায়ন মিজী (২৮)। তাঁদের মধ্যে সাদ্দাম ও হুমায়নের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সাদ্দাম একটি হত্যা মামলায় বেশ কিছুদিন ধরে পলাতক ছিলেন।

লাবনী খাতুন ও রিয়াদ হোসেন উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের দিঘুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৫ জানুয়ারি রাতে নিজ বাড়িতে তাঁদের হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৬ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বাড়ির রান্নাঘর থেকে লাবনী ও বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ের গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় রিয়াদ হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত লাবনী খাতুনের ভাই শাহাদত হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, লাবনী খাতুনের স্বামী আবদুর রশিদ সাত বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। সম্প্রতি তিনি বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে লাবনী ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলে ২৫ হাজার ইট কেনেন। বাকি টাকা বাড়িতে রাখেন। বিষয়টি টের পান লাবনীর পূর্বপরিচিত ও গ্রেপ্তার হওয়া হোসেন আলী। বিষয়টি তিনি ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেনকে জানান। সাদ্দাম গোপালগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। বিষয়টি জানার পর সাদ্দাম তাঁর অপর সহযোগী হুমায়ন কবিরকে খবর দেন। এরপর দুজন ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জেলা সদরের টেবুনিয়ায় আসেন। রাত গভীর হলে হোসেন আলী অপর দুজনকে গ্রামে ডেকে নেন।

আরও পড়ুন

হুমায়ন ও সাদ্দাম রাত ১টার দিকে ঘরের পেছন দিকের টিন কেটে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় লাবনীর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি উঠে কিসের শব্দ, তা জানতে ঘরের দরজা খোলেন। এ সময় হুমায়ন ও সাদ্দাম ঘরে ঢুকেই লাবনীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। এর মধ্যে লাবনীর ছেলে রিয়াদের ঘুম ভাঙে। সে জেগেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। এ সময় সাদ্দাম তাঁকে পুকুরপাড়ে নিয়ে মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখেন।

হুমায়ন ও সাদ্দাম এরপর ঘরে ঢুকে লাবনীর কানে থাকা সোনার দুল ও ট্রাংক খুলে সোনার চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দুই জোড়া রুপার নূপুর ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে হোসেন আলীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে লাবনীর কানে থাকা দুলটি দিয়ে দুজন আবার গোপালগঞ্জে চলে যান।

আরও পড়ুন

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাসুদ আলমের তত্ত্বাবধানে ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ আসামিদের শনাক্ত করে। পরে পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলাটির তত্ত্বাবধানে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন আরেকটি হত্যা মামলার আসামি। ২০২২ সালের অক্টোবরে চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক ড্রাইভারকে হত্যার ঘটনায় এ মামলা হয়। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।