উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট শুরু, ধীরগতিতে অসন্তোষ

কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ লাইন। ভোট গ্রহণেও ধীরগতির অভিযোগ। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায়
ছবি: প্রথম আলো

উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। আজ সোমবার সকাল আটটায় কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু ইভিএমে সমস্যার কারণে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের সারি দীর্ঘ হতে দেখা যায়।

সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের অন্তত ১০টি কেন্দ্র ঘুরে কোথাও গোলযোগ কিংবা ভোট কারচুপির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

সকাল ৮টায় শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় ৪০০ ভোটার। পুরুষ লাইনের পাশে নারী ভোটারের সারি। এই কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই), তিনজন কনস্টেবল ও ১২ জন আনসার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের পৃথক টিম দেখা গেছে।

কলাতলীর ভোটার রফিকুল ইসলাম (৬০) বলেন, সকাল সাতটা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর আগে-পিছে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ২১০ ভোটার। সানজিদা আকতার (৪৫) নামের এক ভোটার বলেন, সাতটার আগে তিনি লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সামনে এখনো অন্তত ৫০ জন দাঁড়িয়ে আছেন।

সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর ১৫ মিনিটে এই কেন্দ্রের ৬টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়েছে ৫১টি। কেন্দ্রের ভোটারসংখ্যা ৩ হাজার ৭০৯। কলাতলী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক শেখর বড়ুয়া বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। এখানে এখন পর্যন্ত ইভিএমে সমস্যা দেখা দেয়নি।

কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এম এ মনজুর (বর্তমান কাউন্সিলর) ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়ার সঙ্গে। দুজনই বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি ভালো।

কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রের ২৪৫টি কক্ষে ভোট গ্রহণ চলছে সকাল থেকে। মোট ভোটারসংখ্যা ৯৫ হাজার ৩৮৬। নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত) মাসেদুল হক রাশেদ (নারকেলগাছ), জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট), মাসেদুল হকের স্ত্রী জোসনা হক (মোবাইল ফোন) ও মো. জাহেদুর রহমান (হাতপাখা)।

সকাল সাড়ে ৯টায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে ছয় শতাধিক ভোটারের সারিবদ্ধ লাইন। কমবেশি সবারই অভিযোগ, ধীরগতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। প্রায় ৩৫০ জনের পুরুষের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মোহাজেরপাড়ার ভোটার আবুল কাশেম (৩৮)। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা আগে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সামনে আরও অন্তত ৭০ জন দাঁড়ানো। খুবই ধীরগতিতে ভোট প্রয়োগ হলেও সবার মুখে হাসি।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শুভংকর পাল বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে ৬০টির মতো। কেন্দ্রের ভোটারসংখ্যা ২ হাজার ২১৭। ইভিএমে মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই ভোট গ্রহণে দেরি হচ্ছে।
এই কেন্দ্রে কথা হয় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ছোট বোন তাহমিনা হকের সঙ্গে। তিনিও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধীরগতিতে ভোট গ্রহণ নিয়ে অভিযোগ করেন।

সকাল ছয়টা থেকে দল বেঁধে নারী-পুরুষেরা ভোটকেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। সকাল ১০টায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ভোটারদের মুখে একই অভিযোগ শোনা গেল। এই কেন্দ্রের মাঠে পুরুষ সারিতে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন নতুন বাহারছড়ার ভোটার ও শ্রমিক পরিবহননেতা আবুল কালাম। তখনো তিনি ভোট দিতে পারেননি। তাঁর সামনে চারজন এবং পেছনে দুই শতাধিক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেন্দ্রের ভোটারসংখ্যা ১ হাজার ১৮৫। জানা গেল, দুই ঘণ্টায় ভোট গ্রহণ হয়েছে মাত্র ১৪৫টি।

আবুল কালাম বলেন, ইভিএমে সমস্যা হচ্ছে, তাই ভোট প্রয়োগ ধীরগতিতে চলছে। ঘণ্টায় ১০-১২টি ভোট দেওয়া যাচ্ছে। এ হিসাবে বিকেল চারটা পর্যন্ত ৪০ শতাংশের বেশি ভোট দেওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শহরের ৩, ২, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আরও কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারের অনেক উপস্থিতি দেখা গেছে। সকাল ১০টায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএমে সমস্যার কারণে ভোট গ্রহণে মারাত্মক ধীরগতি চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান।

পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১২টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলতে দেখেছেন তিনি। ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে ভোট কারচুপি কিংবা অন্য কোনো অভিযোগ আসেনি। বিপুলসংখ্যক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ঠেলাঠেলি ও বুথের প্রবেশমুখে ভিড় করছেন। সম্ভবত এ কারণে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ধীরগতিতে হচ্ছে। তবে কয়েকটি বুথে আঙুলের চাপ নেওয়ায় যন্ত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে খবর পান তিনি। তাতে ভোট নেওয়া বন্ধ হয়নি।