নির্ধারিত সময়ের ৩ মাসও সেতুর কাজ শেষ হয়নি

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাংশা-কালীতলা সড়কের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বিরু মন্ডলের ঘাট বড় সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এতে বিকল্প সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়িছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত সময়ের তিন মাস পরও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাংশা-কালীতলা সড়কের যশাই ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বিরু মণ্ডলের ঘাট বড় সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। কাজ শুরুর পর বেশ কয়েকবার তা বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ তিন মাস আগে আবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এভাবে বারবার সেতুর কাজ বন্ধ রাখায় এই স্থান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাংশা উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাংশা শহর থেকে রাস্তাটি বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রাম কালীতলা পর্যন্ত চলে গেছে। সেতুর নিচে বড় একটি খাল। দুই পাশে পাকা রাস্তা। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে ৪০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতু দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, ইজিবাইক, নছিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ভ্যানসহ কয়েক শ যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন পাংশার তিনটি ইউনিয়নসহ আশপাশের আরও কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করে।

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বিরু মণ্ডলের ঘাট বড় সেতু জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এতে এই সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘নড়বড়ে সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল’ শিরোনামে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৭ হাজার ২০৩ টাকা। নতুন সেতুর দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ১ মিটার। সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামারজানী ট্রেডার্স। কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ৬ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা ছিল।

সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘব করার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী, ইউএনও, পাংশা, রাজবাড়ী

সরেজমিন দেখা যায়, পাংশা-কালীতলা সড়কের যশাই ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বিরু মণ্ডলের ঘাট এলাকায় পুরোনো সেতুর পূর্ব দিক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ সড়কের দুই পাড় বেশ খাড়া। ট্রাক, ইজিবাইক, নছিমন, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। ভারী মালামাল বহনকারী যানবাহন নিয়ে খাড়া পথ উঠতে সমস্যা হচ্ছে। ইজিবাইক ও ভ্যানের যাত্রীরা নেমে ওই রাস্তা পার হচ্ছেন। সেতুর দক্ষিণ পাশে খোয়া এনে রাখা হয়েছে।

মোটরসাইকেল আরোহী রেজা আহসান বলেন, ‘আমি প্রায়ই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। সেতুর কাজ অনেক দিন ধরে বন্ধ। এটি কৃষিপ্রধান এলাকা। আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়ন ও খেয়া পার হয়ে পাবনার লোকজন যাতায়াত করে। তবে কৃষিপণ্য নিয়ে ভ্যান, নছিমন, ঘোড়া বা মহিষের গাড়িতে খুব কষ্ট হয়। জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারলে খুব ভালো হয়।’

ইজিবাইকের যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, চর অঞ্চলের সবজিসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল নিয়মিত এই রাস্তা দিয়ে ১০-১২টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। দেড়-দুই বছর আগে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু শেষ হওয়ার কোনো নাম নেই। আর বৃষ্টি হলে রাস্তাটি খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন মালামাল নিয়ে এই অংশটুকু পার হতে খুব কষ্ট হয়।

এলজিইডি পাংশা উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ওই কাজের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মাঝখানে কাজ বন্ধ ছিল। আমরা ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়েছি। কাজ করার জন্য নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

পাংশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার ফরিদ হাসান ওদুদ বলেন, ‘বর্ষার কারণে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। সেতুর নির্মাণকাজে আমার শেয়ার আছে। তবে মূল ঠিকাদার আমি না। আমি টাকা তেমন একটা ইনভেস্ট করি নাই। তবে কাজ শেষ হলে আমার একটা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা আছে। আবেদন করে কাজ শেষ করার সময় ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, আবেদন করা সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে পারব।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সঞ্জীবন সাহা বলেন, ‘গার্ডার সেতুর কাজ আমাদের এলাকার শ্রমিকেরা করতে পারে না। বাইরে থেকে আনা শ্রমিকেরা এসব কাজ করে। তারা আরেকটি সাইটে কাজ করছে। ইতিমধ্যে পাথর সাইটে চলে এসেছে। পাথর পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’

পাংশার ইউএনও মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘ওই সেতু নির্মাণের কাজ কিছুদিন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমরা অবগত। চলতি মাসে উপজেলা সমন্বয় সভায় জনদুর্ভোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সংসদ সদস্য মহোদয় ছিলেন। সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘব করার জন্য দ্রুত কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।’