দর্শকের অভ্যস্ততা ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন নির্মাতা মেজবাউর

‘সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র প্রবণতায় হাওয়া গড়ে ওঠা/ নির্মাণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

বহুল আলোচিত হাওয়া সিনেমার নির্মাতা মেজবাউর রহমান বলেছেন, হাওয়া সিনেমা দিয়ে দর্শকের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততাকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। গল্পটা নিজের মতো করে বলতে চেয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র প্রবণতায় হাওয়া গড়ে ওঠা/ নির্মাণ’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন এই নির্মাতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ একাডেমিক ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে ‘ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা ১০’ আয়োজন করে চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ও সংগঠন ম্যাজিক লণ্ঠন।

আলাপে অংশ নিয়ে মেজবাউর রহমান বলেন, তিনি আসলে একটা অভ্যস্ততাকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন। ফর্মুলা ছবিতে যে অবস্থা এখানকার দর্শকদের হয়েছে, একটু লবণ লাগবে, লবণটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আরেকটু হলে বেশি স্বাদ লাগত। এই যে দর্শকের যে চাওয়া নিজের মতো করে—একটু নাচ লাগবে, একটু গান লাগবে। এটার বাইরে গিয়ে একটু লবণ কম, স্বাদ কম, তেলটা কম। তেমনই লবণবিহীন একটা গল্প বলতে চেয়েছিলেন। গল্পটা নিজের মতো করে বলতে চেয়েছিলেন। নিজের চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

মেজবাউর রহমান বলেন, ‘এই ছবিটা দর্শক দেখবে না বলেই মনে হয়েছিল। এর পেছনে অনেক কারণও আছে। এর মধ্যে এই সিনেমায় নাচ–গান নেই, অ্যাকশন নেই, অনেক কিছুই নেই। তবে এটা গণমানুষের গল্পের ছবি বলে দর্শকেরা দেখেছে। এখন একটা সিনেমাই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন করতে পারে না। দর্শকের রুচির পরিবর্তন করতে গেলে একটা লম্বা যাত্রা দরকার। সাহস নিয়ে নির্মাতাদের সেই যাত্রাটা শুরু করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে কবীর সুমনের গানের কয়েকটি লাইন পড়ে শোনান মেজবাউর রহমান। ‘কেটে নেয় গাছ গুঁড়িটা রয়েছে পড়ে/ তাতে মেলে দেওয়া রঙিন লুঙ্গি ওড়ে/ রাস্তার কলে রিকশাওয়ালার স্নান/ তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান’। মেজবাউর রহমান বলেন, কলেজে পড়াকালে গানটি শুনেছিলেন। তখন ভেবেছিলেন এটা কী করে একটা গান হয়? গান তো হয় ‘আমি-তুমি ভালোবাসি’ এগুলো দিয়ে। এই লাইনগুলো তাঁর মধ্যে তাড়না তৈরি করে। তেমনিভাবে তিনি দর্শককে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। সেখানে অনেকগুলো বলা ও না বলা কথা আছে।

মেজবাউর রহমান বলেন, সিনেমার গল্পটা পাঁচ বছর আগেই করা হয়েছিল। তারপর সাগরে গিয়ে সেখানকার জেলেদের জীবনযাত্রা দেখেছেন। সিনেমার প্রতিটি চরিত্র, অভিনয়, সংলাপ, শব্দ, গালি—যা কিছু আছে, সবই একেবারে জীবন থেকে নেওয়া। জেলেদের সঙ্গে মিশতে মিশতে যা পেয়েছেন, সবই লিখে রেখেছেন। সেগুলো সিনেমায় এসেছে। সিনেমায় নিজেরা কিছু করতে চাননি। অনেক ধার করা জিনিসের গল্প এই হাওয়া।

সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা বলেন ‘হাওয়া’ সিনেমার নির্মাতা মেজবাউর রহমান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

সিনেমাটির শুটিং গোপনে হয়েছে উল্লেখ নির্মাতা বলেন, শুটিং চলাকালে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এ ইউনিট আটকা পড়লে সাংবাদিকেরা জেনে যান। তখন কিছু নিউজ হয়ে যায়। এরপর আর কোনো নিউজ হতে দেননি মুক্তির আগে। তাঁরা দর্শকদের একটা চমক দিতে চেয়েছিলেন। এই চমকই দর্শকদের হলে টেনেছে।

বক্তব্য শেষে মেজবাউর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দেন। কেউ তাঁকে প্রশ্ন করেন সিনেমার নাম হাওয়া কেন, প্রচারের জন্য বিশেষ কিছু করা হয়েছিল কি না, সিনেমায় আসা কীভাবে, প্রযোজক পেলেন কীভাবে—এমন সব প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ সদস্য রীতা জান্নাত ও কামরুজ্জামান ফাহাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক সোহাগ আবদুল্লাহ। আরও বক্তৃতা করেন কথাসাহিত্যিক মামুন হুসাইন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও নিরিখ সম্পাদক সফিকুন্নবী সামাদী, গবেষক ও তাত্ত্বিক আ-আল মামুন। অনুষ্ঠানে ‘হাওয়া’র নির্বাহী প্রযোজক শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস ও এডিটর সজল অলক উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক সোহাগ আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচককে সম্মাননা, ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সদস্যরা।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ১১ মার্চ ‘ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা ৯’-এ চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার আলোচনায় অংশ নেন। এ আয়োজনে এর আগে কথা বলতে এসেছেন চলচ্চিত্রনির্মাতা নুরুল আলম আতিক, আবু সাইয়ীদ, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, অভিনয়শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, চলচ্চিত্রনির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী কাজী হায়াৎ, অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, চলচ্চিত্রনির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী রাইসুল ইসলাম আসাদ। ম্যাজিক লণ্ঠন নামে পত্রিকা ও সংগঠনটির যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। জানুয়ারি ও জুলাই মাসে নিয়মিত প্রকাশনা বের করে সংগঠনটি।