চার কোটি টাকার স্লুইসগেট পানির নিচে, ৬০০ একর জমির চাষাবাদ বন্ধ

জোয়ারের পানির ধাক্কায় এক বছরের মাথায় ২০২১ সালে গেটটির নিচ থেকে মাটি সরতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্লুইসগেট প্রায় পানির নিচে চলে যায়। ফলে জোয়ারের পানিতে ছয় গ্রামের চাষাবাদ এখন বন্ধ।

ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেট। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় চাতরী ইউনিয়নেছবি: প্রথম আলো

স্লুইসগেটটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা। জোয়ারের পানি আটকাবে, ছয় গ্রামের চাষাবাদ হবে—এটিই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে এর কোনো সুফল এলাকাবাসী পাননি। এত টাকা ব্যয়ের পরও স্লুইসগেটটি পানির নিচে। জোয়ারের পানিতে এখনো তলিয়ে যায় ছয় গ্রামের প্রায় ৬০০ একর জমি।

দৃশ্যটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় চাতরী ইউনিয়নের। ওই ইউনিয়নের বাকখাইন কান্দরিয়া খালের মুখে ২০১৮ সালে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তবে জোয়ারের পানির ধাক্কায় এক বছরের মাথায় ২০২১ সালে গেটটির নিচ থেকে মাটি সরতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্লুইসগেট প্রায় পানির নিচে চলে যায়। ফলে জোয়ারের পানিতে ছয় গ্রামের চাষাবাদ এখন বন্ধ। অনেক পুকুর ও ডোবাও নিয়মিত ভেসে যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে হেঁটে ইউনিয়নের বাকখাইন গ্রামের শিক্ষার্থী–লোকজন আনোয়ারা সদরে যাতায়াত করতেন। কিন্তু স্লুইসগেট গেট তলিয়ে যাওয়ায় এখন উপজেলার শিকলবাহা খাল পাড়ি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ গেটের কারণে দুই বছর ধরে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কেঁয়াগড়, সিংহরা, ৫ নম্বর ওয়ার্ড, ডুমুরিয়া, রূদুরা ও পটিয়া উপজেলার বাকখাইন গ্রামের নিচু জমিতে চাষাবাদ বন্ধ। জোয়ারের পানি বাড়লে অনেক সময় বসতবাড়ির আঙিনায়ও পানি উঠছে।

‘আমরা জমিতে বছরে তিনবার চাষাবাদ করতাম। তবে দুই বছর ধরে তা আর হচ্ছে না। অকেজো স্লুইসগেটই এখন গলার কাঁটা।’
হৃষীকেশ দত্ত, কেঁয়াগড় গ্রামের বাসিন্দা

জানতে চাইলে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শামীম আহমদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, স্লুইসগেট গেটের কারণে ছয় গ্রামের প্রায় ৬০০ একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। ফলে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে ওই অঞ্চলের চাষিদের।

গত শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইসগেটটির সামান্য অংশ পানির ওপর ভেসে রয়েছে। দূর থেকে স্লুইসগেট গেটের অস্তিত্বই টের পাওয়া মুশকিল। লোকজন চলাচল না করায় স্লুইসগেটের দুই পাশে খালের অংশ এখন ঝোপঝাড়।

জানতে চাইলে কেঁয়াগড় গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক হৃষীকেশ দত্ত বলেন, ‘আমরা জমিতে বছরে তিনবার চাষাবাদ করতাম। তবে দুই বছর ধরে তা আর হচ্ছে না। অকেজো স্লুইসগেটই এখন গলার কাঁটা।’

তবে ওই এলাকায় নতুন করে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্লুইসগেট নতুন করে নির্মাণের একটি প্রকল্পের কার্যাদেশ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। বৃষ্টি কমলে দ্রুত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।