সুস্থ হয়ে উঠছেন হালিমা, পাশে দাঁড়াতে চাইছেন অনেকে

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হালিমা আক্তার। মঙ্গলবার বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দারিদ্র্যের কারণে নবজাতক সন্তানকে দত্তক দেওয়া প্রসূতি হালিমা আক্তার (২২) সুস্থ হয়ে উঠছেন। বর্তমানে তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মা ও শিশু বিভাগে ভর্তি আছেন।

এদিকে হালিমা আক্তার–স্বপন মিয়া দম্পতির দুঃখভরা জীবনের গল্প প্রথম আলোতে প্রকাশের পর দেশ–বিদেশ থেকে অনেক সাড়া মিলেছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংস্থা দরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁদের নগদ অর্থসহায়তা দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে হালিমা আক্তারের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। এদিন হাসিমুখে কথা বলেছেন তিনি। বিছানায় উঠে বসেছেন। হালিমা বলেন, পেট আর মেরুদণ্ডে ব্যথা আছে। বিছানায় বসতে পারছেন। কিন্তু উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। তবে আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থবোধ করছেন।

অনেকেই তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানিয়ে হালিমা আক্তার বলেন, সোমবার রাত থেকে অনেকেই মুঠোফোনে কল করে খোঁজ নিয়েছেন। আজ সকাল থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অনেকেই সন্তানদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান।

এর আগে সোমবার হালিমার স্বামী স্বপন মিয়া জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। হালিমার বাবার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। দুজন ভালোবেসে বিয়ের পর স্বপনের পরিবার মেনে নেয়নি। এর পর থেকে হালিমাদের বাড়িতেই থাকতেন স্বপন। সেখানে রিকশা চালাতেন। তিন সন্তান আর তাঁরা স্বামী–স্ত্রী মিলে পাঁচজনের সংসার রিকশা চালিয়ে আর চলছিল না। কাজের খোঁজে স্বপন–হালিমা দম্পতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আসেন। দুই হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন। আট হাজার টাকা বেতনে একটি কারখানায় কাজ শুরু করেন স্বপন। ঠিকঠাক বেতন পাচ্ছিলেন না। কোনো রকমে খেয়ে না–খেয়ে থাকতে থাকতে ওই কাজ ছেড়ে দেন তিনি। দুই মাস ধরে তিনি দিনমজুর হিসেবে যখন যে কাজ পেয়েছেন, করেছেন। এর মধ্যে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এদিকে তিন মাসের বাড়িভাড়া বকেয়া পড়ে। মালিক ঘর ছাড়তে তাগাদা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

সন্তান বিক্রির বিষয়ে গতকাল হালিমা বলেছিলেন, বিক্রি করেননি। অভাবের তাড়নায় একজনকে দিয়ে দিয়েছেন। গত শনিবার মধ্যরাতে তাঁর প্রসবব্যথা শুরু হলে ধাত্রীর খোঁজ করা হয়। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে ভাড়া দিয়ে যাওয়ার মতো টাকা তাঁদের ছিল না। তীব্র ব্যথার একপর্যায়ে স্বাভাবিকভাবে তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ভোরে এক দম্পতি এসে লালনপালনের জন্য নবজাতকটি নিয়ে যান।

দত্তক দেওয়া নবজাতকের বিষয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে আজ হালিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা সন্তান নিচ্ছেন, তাঁরাও নিঃসন্তান। আমার দুঃসময়ে তাঁরা আশা কইরা মেয়েটারে নিয়া গেছে। এখন ফিরাইয়া নিয়া আসলে তাঁরাও কষ্ট পাইব। কী করমু এখনো সিদ্ধান্ত নিই নাই।’

স্বপন মিয়া বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই তাঁর বাড়িতে সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। তাঁর তিন সন্তান বাড়িতেই আছে। প্রতিবেশীরা সন্তানদের দেখভাল করছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আইভী ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে হালিমার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁকে পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ খাবার দেওয়া হচ্ছে। শরীরের যতটুকু সমস্যা আছে, সেগুলো প্রসব–পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক। শিগগির বাড়ি ফিরতে পারবেন হালিমা।