জাজিরায় প্রার্থীর ওপর হামলা, ৫ সাংবাদিককে মারধর, ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ

জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার শিকার (বাঁ থেকে) সাংবাদিক সানজিদ মাহমুদ, পলাশ খান ও বরকত মোল্ল্যা। আজ দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ১০ নম্বর ভোটকেন্দ্র ফরাজি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকেরা এ হামলা চালিয়েছেন।

হামলার ছবি তুলতে গেলে মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকেরা সাংবাদিকদেরও মারধর করেন। এতে পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাঁদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ভোটকেন্দ্রে ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরাজি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানা ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষে প্রবেশ করার পর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের কেন্দ্র থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। তখন কেন্দ্রের মাঠের মধ্যেও ঝামেলা হয়। ওই কারণে কেন্দ্রের দরজা ও জানালা বন্ধ করে রাখি। এ কারণে ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজি (মোটরসাইকেল প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামছুল হক খান (দোয়াত-কলম প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক), জাজিরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন (কাপ-পিরিচ প্রতীক) এবং নান্নু মিয়া (আনারস প্রতীক)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাজিরার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৬৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে।

ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকেরা পাঁচ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেন। এরপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ও তাঁর লোকজনকে মারধর করেন তাঁরা।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির বাড়ির কাছে ফরাজি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ৫৯ জন। দুটি ভবনে পাঁচটি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। বেলা ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রে যান ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। একটি কক্ষে প্রবেশ করার পর ইদ্রিস ফরাজির এজেন্টদের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে এগিয়ে যান। তখন ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকেরা পাঁচ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেন। এরপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ও তাঁর লোকজনকে মারধর করেন তাঁরা।

আহত সাংবাদিকেরা হলেন জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি পলাশ খান, ঢাকা ক্যানভাসের সাংবাদিক বরকত মোল্ল্যা, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান, জবাবদিহির প্রতিনিধি সানজিদ মাহমুদ এবং স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক রুহুল আমীন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিক বরকত মোল্ল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে কেন্দ্রের ভেতরে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবর শুনে আমরা ছবি তুলতে যাই। তখন ইদ্রিস ফরাজির লোকজন আমাদের মারধর করেন। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। প্রেসক্লাবের সভাপতি পলাশ খানকে মেরে মুখ ও নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

হামলার শিকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলামকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্বজন রায়হান আশরাফি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চাচা (আমিনুল) ইদ্রিস ফরাজির বাড়ির কাছের ভোটকেন্দ্রে গেলে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ইদ্রিস ফরাজির লোকজন হামলা করে আমাদের কর্মীদের ও প্রার্থীকে মারধর করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইদ্রিস ফরাজির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর ওপর ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’