পচে যাওয়া আলুর ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন
আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানো এবং পচে যাওয়া আলুর ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগারমালিকেরা চলতি মৌসুমে ৫০ কেজির আলুর বস্তা সংরক্ষণের জন্য ২৬০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। অথচ গত মৌসুমে ৭০ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। ওই হিসাবে প্রতি কেজি বস্তার সংরক্ষণে খরচ হয়েছিল ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। এ ছাড়া এ বছর মানিকগঞ্জে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ১৭৫ টাকা এবং মুন্সিগঞ্জে ২১০ থেকে ২২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, মৌসুমের শুরুতে চাষি-ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবি তুলে কয়েক দফা আন্দোলন করেছিলেন। ওই সময় জেলা প্রশাসন তাদের ভাড়া কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জেলা প্রশাসন এখন টালবাহানা করছে। এদিকে বেশি দরে আলু সংরক্ষণ করেও জেলার বেশ কয়েকটি হিমাগারে কৃষকের সংরক্ষণ করা আলু পচে গেছে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অধিকাংশ হিমাগারে ঠিকমতো জেনারেটর না চালানো ও অদক্ষ কর্মী দিয়ে মেশিন পরিচালনার কারণে হিমাগারে এসব আলু পচে যাচ্ছে। এতে কৃষক কোনো কোনো ৫০ কেজির বস্তায় ১০ কেজির মতো আলু পাচ্ছেন। আলু পচে গেলেও কৃষককে বস্তার ভাড়া ২৬০ টাকা দিতে হচ্ছে।
মানববন্ধনে জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতির উপদেষ্টা নুরুল হুদা, সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক, কৃষক মোহাম্মদ হেলাল, আবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর (১ হেক্টর সমান ২ দশমিক ৪৭ একর) জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এ থেকে পাওয়া গেছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিকটন আলু। আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় ১৫টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিকটন আলু সংরক্ষণ করা যায়।
আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য ৫ টাকা ২০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে হিমাগারমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সেই হিসাবে ৫০ কেজি আলুর বস্তাপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২৬০ টাকা।
হিমাগার ভাড়া কমানোর দাবিতে গত ৬ জুন ঠাকুরগাঁও শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানকে স্মারকলিপি দেন। জেলা প্রশাসক সে সময় হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় হলে ভাড়া কমানোর পক্ষে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ দাবির বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁওয়ের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ বলেন, বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকের মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৫ দশমিক ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে অ্যাসোসিয়েশন। আর হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু পচে যাওয়ার তথ্য তাঁদের জানা নেই।
পরে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় জেলা প্রশাসক আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই করে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।