তবু নির্বাচনের মাঠে জাহাঙ্গীর

উচ্চ আদালতে রিট করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি জাহাঙ্গীর আলম। তবে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। মায়ের হয়ে প্রচারণায় নামবেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানিক প্রচার। গতকাল ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। অনেকে মনে করছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন জায়েদা খাতুন।

গাজীপুর সিটির নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তত চারজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, নির্বাচনে জায়েদা খাতুন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছেলে জাহাঙ্গীরের কারণে তাঁর অনুসারী কর্মী ও সমর্থকেরা জায়েদা খাতুনের নির্বাচন করে যাবেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর শ্রমিকনেতা, হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সব সময় সখ্য রেখেছেন। এ কারণে তাঁরাও জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী প্রকাশ্যে আজমত উল্লার জন্য কাজ করলেও গোপনে তাঁরা জাহাঙ্গীরের কর্মী–সমর্থক।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। জাহাঙ্গীরের মা রয়েছেন এবং আরও অনেক প্রার্থী আছেন। ১০ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হবে। তখন আসলে বোঝা যাবে আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই । কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। যার কথা বলছেন তাকে নিয়ে আমরা ভাবছি না।
আজমত উল্লা খান, আ.লীগের মেয়র প্রার্থী

নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৩০ এপ্রিল যাচাই–বাছাই শেষে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ঋণখেলাপির কারণে। উচ্চ আদালতে রিট করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এখন মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আটজন। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রার্থী রয়েছেন।

মেয়র নির্বাচন নিয়ে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের ভাষ্য, এবারের নির্বাচনে লড়াই হবে আজমত উল্লা ও জায়েদা খাতুনের মধ্যে। নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন এলাকার ভোটার নাসির উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীর মেয়র থাকার সময় এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। তাঁর কারণেই এলাকার ভোটাররা তাঁর মায়ের জন্য কাজ করবেন।

আমার মা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছেন, মায়ের মাধ্যমে স্বপ্নগুলো পূরণ করব।
জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক মেয়র

জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটির মেয়র থাকাকালে গাজীপুর মহানগরীতে তাঁর ব্যাপক জনসর্থন গড়ে ওঠে। তৈরি করেছেন নিজের অনেক অনুসারী। মায়ের প্রচারণার ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাতে চান জাহাঙ্গীর। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য হাইকোর্টের রিট গতকাল বাতিলের পর মায়ের হয়ে নির্বাচনে লড়ে যাবেন বলে জানান তিনি। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার মা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছেন, মায়ের মাধ্যমে স্বপ্নগুলো পূরণ করব।’

নিজের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়ার বিষয়ে অনেক দিন মুখ খোলেননি জায়েদা খাতুন। গত শনিবার প্রথমবার বিষয়টি নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হন তিনি। সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে, তা আমি ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই। আমি ছেলের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’

অপর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে নানা কৌশলে ভোটের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে গাজীপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। আজমত উল্লার জন্য অনেকটা উঠেপড়ে লেগেছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা। আজমত উল্লার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও আনে নির্বাচন কমিশন। কমিশনে সশরীর গিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবও দিতে হয়েছে তাঁকে।

এরপর থেকে আগাম প্রচারে কিছুটা নমনীয় আজমত উল্লার পক্ষ। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর তারা ব্যাপক আয়োজনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামবে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে আজ বিকেলে গাজীপুরের একটি কনভেনশন সেন্টারে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

জাহাঙ্গীরের মা প্রসঙ্গে আজমত উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই। কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। যার কথা বলছেন তাকে নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের নির্বাচন নিয়েই এখন ব্যস্ত রয়েছি।’