ঘটনার দিন শনিবার রাতেই রবি ও সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ক্লাস শুরু হয় গত মঙ্গলবার থেকে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেছেন। গত বুধবার থেকে বেশ কিছু বিভাগে পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। তবে অনেক বিভাগে চলমান পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বিনোদপুর বাজারের চার শতাধিক দোকানপাট বন্ধই রাখা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, দোকানপাট পোড়ানো ও ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা আশ্বাস না পেলে একযোগে সব দোকানপাট বন্ধ রাখবেন। তবে কিছু দোকানপাট কৌশলে খোলা রাখা হয়েছিল। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাও চাচ্ছিলেন দোকানপাট খুলতে। পরে আলোচনার পর আজ শুক্রবার থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে বাজারের অধিকাংশ দোকান খোলা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে পুলিশের গাড়িতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। সেখানে ভেঙে যাওয়া দোকানপাট ঠিক করা হচ্ছিল। তবে উত্তর পাশে পুড়ে যাওয়া সব দোকান ঠিক করা হয়নি। দু-একজন ওই পুড়ে যাওয়া দোকানেই বসেছেন। কেউ কেউ ঠিক করছেন।
বাজারের উত্তর পাশে পুড়ে যাওয়া মাংসের দোকান খুলেছেন মো. বাবলু। তিনি বলেন, বাজার সমিতি আলোচনায় বসেছিল। তাঁদের আজ থেকে দোকানপাট খুলতে বলেছেন। দোকানের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
উত্তর পাশে জুতা পলিশ ও সেলাইয়ের কাজ করেন প্রদীপ চন্দ্র দাস। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে বিনোদপুরে এই কাজ করেন। তাঁর ক্রেতা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ভাঙা ও পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঝাড়ু দিয়ে বসেছেন তিনি। বললেন, সামান্য ঘটনা বড় হতে দেখেছেন। দূর থেকে দোকানটি দাউ দাউ করে পুড়তে দেখেছেন। জুতো পলিশের সব কালি পুড়ে গেছে। দোকানে এক শিক্ষকের এক জোড়া জুতো ছিল। দাম ৫ হাজার টাকার মতো। সেটি দেখিয়ে বললেন, এটাসহ আরও অনেকগুলো জুতো পুড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে এসে দুই ঘণ্টায় একটি কাজ পেয়েছেন। এই ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হয়তো এখানে কম আসবেন। এ সম্পর্ক জোড়া লাগতে সময় লাগবে।
পাশেই ন্যাশনাল বাস কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার সাইদুর রহমান পানি দিয়ে দোকানটি পরিষ্কার করছিলেন। বললেন, দোকানে কিছুই নেই। সব পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না।
দক্ষিণ পাশের প্রায় সব দোকান খোলা হয়েছে। সে পাশে তেমন ক্ষতি হয়নি। দুই একটি দোকানে সাটার বাঁকানো ও কাটা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে ভেঙে যাওয়া দোকান ঠিক করছিলেন মো. জাহিদুল ইসলাম। তাঁর মুঠোফোন সার্ভিসিংয়ের দোকান। তিনি বলেন, দোকানের সাঁটারে আঘাত লাগায় ভেতরের কাচ ভেঙে গেছে। ভেতরে কিছু মুঠোফোনের ক্ষতি হতে পারে।
বাজারের সবচেয়ে বড় খাবারের দোকান হোটেল রিয়াদ খুলেছে। তবে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তেমন ক্রেতা নেই। মালিকপক্ষ সে জন্য দোকানটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার দিকেই মনোযোগ দিয়েছে।
বিনোদপুর বাজারের রাস্তার উত্তর পাশ একেবারে পশ্চিম দিকে সবজি, মাছ ও মাংসের বাজার। এখানে আজ ব্যাপক ভিড় ছিল। ক্রেতা হিসেবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই সংঘর্ষে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ক্ষতটা তাঁদের বেশি। তবে বিরোধপূর্ণ অবস্থা শিক্ষার্থীরা পছন্দ করেন না। ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি হয়েছে, এটা মেনে নিতে হবে।
ওই বাজারের কাঁচা সবজি ব্যবসায়ী রায়হান হোসেন বলেন, আজকে ক্রেতা বেশি। অন্য দিনগুলোতে দোকানপাট খুলতেই সমস্যা হতো। আজকে অনুমতি মিলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেতাও পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাজার সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে বাজারেও দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাজার সমিতিকে ডেকেছিলেন। সেখানে আলোচনা হয়েছে। ক্ষতি তো সবারই হয়েছে। ছাত্রদের ক্ষতি হয়েছে অনেক। দুই ২০০ বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদেরও দোকান পুড়েছে, এটাও ঠিক। সেখানে সবাইকে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করার কথা বলা হয়েছে। তাঁরা সেখানে বৈরী মনোভাব না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।