ভোলার গ্যাস নিজেরা ব্যবহার করতে চান ভোলাবাসী, পাঁচ দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

ভোলার গ্যাস ভোলায় ব্যবহারসহ ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকেলে ভোলার বাংলাস্কুল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার গ্যাস ভোলায় ঘরে ঘরে না দিয়ে, জেলার বাইরে সরবাহের প্রতিবাদে এবং ইন্ট্রাকো কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ–সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ভোলার বাংলাস্কুল মাঠে ‘আগামীর ভোলা’ নামক একটি ফ্ল্যাটফর্ম এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

বিক্ষোভ শেষে ভোলা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় প্রতিবাদ-সমাবেশ, বিক্ষোভ ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বদ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদ গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত ইন্ট্রাকো কোম্পানির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজে) বহন করা আরও ট্রাক আটক করে। এলপিজিবাহী ট্রাকগুলো ভোলা-চরফ্যাশন আন্তমহাসড়কের পাশে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্টান্ড এলাকায় হেলিপ্যাডের কাছে আটক আছে। ছাত্র-জনতা তাঁদের দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন।

ভোলার মানুষের পাঁচটি দাবি। এর মধ্যে অন্যতম ভোলার গ্যাস দিয়ে ভোলায় কলকারখানা নির্মাণ করতে হবে, ভোলার মানুষের ঘরেও গ্যাস দিতে হবে। যার কোনোটি না করে পানির দরে ইন্ট্রাকো কোম্পানিকে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার এ চুক্তি করেছে, এ চুক্তি বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া ভোলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের।

জেলার বাসিন্দাদের ভাষ্য, ভোলাবাসী এখন বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। ভোলার হাসপাতালগুলোতে ব্যাপক হারে চিকিৎসক–সংকট। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকা নয়তো বরিশাল পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বরিশাল–ঢাকা পৌঁছানোর আগেই রোগী মারা যাচ্ছে। কারণ, ভোলার চারপাশে নদী। ঘর থেকে বের হয়ে বারবার নৌযানে ওঠানামা করতে হয়। আবার রাতের বেলা, যখন–তখন নৌযান থাকে না, তখন অবৈধ নৌযানে নদী পার হতে হয়। এসব কারণে ভোলা-বরিশাল সেতু দরকার। দরকার শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা ভোলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এসব দাবি বাস্তবায়নে তিন বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন ভোলার মানুষ, যা এখনো চলমান।

এসব দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় হাজার হাজার মানুষ বাংলা স্কুলমাঠে বিক্ষোভ-সমাবেশস্থলে জড়ো হন। সমাবেশে উপস্থিত হন বিএনপি, জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতি কর্মীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত মানুষ ও ‘আগামীর ভোলা’ ফ্ল্যাটফর্ম তাদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২৭ এপ্রিল ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য বলেছে। সেখান থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সচিবালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

‘আগামীর ভোলা’–এর মুখপাত্র মীর মোহাম্মদ জসিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ভোলা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রাইসুল আলম, ভোলা শহীদ জিয়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খালেদা খানম, বিজেপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, ভোলা জামায়াতের পৌর আমির জামাল উদ্দিন, ভোলা ইসলামিয়া মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মাজহার উদ্দিন, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বির হক নাইম, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, সংস্কৃতি কর্মী তালহা তালুকদার, ‘আগামীর ভোলা’ সংগঠনের মুখ্য সংগঠক মীর মোশারেফ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০২৩ সালের মে মাসে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি একটি অসম চুক্তি করে। ২২ নভেম্বর ভোলা থেকে ট্রাকে করে গ্যাস নেওয়া শুরু হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার চলে গেলেও চুক্তি বাতিল হয়নি। তিন বছর ধরে ভোলাবাসী বিভিন্ন ব্যানারে পাঁচটি দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু এবার ভোলাবাসী অনেকটা সংঘবদ্ধ।