ঢাকা-সিলেট ও ভৈরব-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ছোট যানে ভেঙে ভেঙে দীর্ঘযাত্রা, ভোগান্তি

যাত্রীর অপেক্ষায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে ভৈরব র‌্যাব ক্যাম্পের সামনে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে
ছবি: সুমন মোল্লা

ব্যবসার কাজে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামের হামিদ মিয়াকে আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরে থাকতে হবে। বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে গাড়ির যাত্রা অনিশ্চিত ভেবে সকাল আটটায় তিনি ভৈরব বাসস্ট্যান্ড আসেন। গাড়ি ছাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি জানতে পারেন। তাই গন্তব্যে পৌঁছাতে ভরসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। তা–ও আবার যেতে হবে ভেঙে ভেঙে।

দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে হামিদ মিয়া বলেন, ‘আর সহ্য হচ্ছে না। এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তার ওপর হরতাল-অবরোধ। সব মিলিয়ে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে এসে যুক্ত হয়েছে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন কয়েকটি জেলার মানুষ নানা প্রয়োজনে ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে এসে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়ির যাত্রী হন। গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া বিএনপির টানা দুই দিনের অবরোধের আজ শেষ দিনে মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। ছোট ছোট যানবাহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মানুষকে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের।

আজ সকাল ৯টার দিকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকা শান্ত ও স্বাভাবিক দেখা যায়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কোনো দলের নেতা-কর্মীদের মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ সদস্যরা তৎপর আছেন। র‌্যাব ও বিজিবির গাড়ি টহল দিচ্ছে। যাত্রীরা বাস না পেয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করছেন। কম দূরত্বের পথে অনেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে যাচ্ছেন। আর দীর্ঘপথের যাত্রীদের ছোট পরিবহনে ভেঙে ভেঙে যেতে দেখা যায়।

ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কাছে সারি করে বেশ কিছু অটোরিকশা থেমে থাকতে দেখা যায়। ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা এই স্থান থেকে অটোরিকশা ভাড়া করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের যাত্রীরা অটোরিকশার আরোহী হচ্ছেন নাভানা সিএনজি পাম্পের সামনে থেকে। কথা হয় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী আবু নাসেরের সঙ্গে। হবিগঞ্জ যেতে তিনি বাসের আশায় ভৈরব স্টেশনে আসেন। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকে বাসের দেখা পাননি।

আবু নাসের বলেন, ‘এখন ভাবছি অটোরিকশায় প্রথমে যাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বিশ্বরোডে। সেখান থেকে আরেকটি অটোরিকশায় হবিগঞ্জের মাধবদী। পরে আরেকটি দিয়ে মূল গন্তব্যে। এতে সময় ও ব্যয় কয়েক গুণ বেশি হবে।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দ নজরুল সড়ক সেতুর ভৈরব টোলপ্লাজা সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের কয়েক দিন আগে থেকে বাস চলাচল কমতে শুরু করে। মহাসমাবেশের দিন বাস চলাচলের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। অবরোধ শুরুর পর সংখ্যাটি আরও কমে যায়। শুক্র ও শনিবার অবরোধ না থাকলেও প্রত্যাশিত গাড়ি চলেনি। এই অবস্থায় সেতুর টোল আদায়ের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অবরোধ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচলের সংখ্যা বাড়বে না।

অসুস্থ মেয়েকে দেখতে যেতে বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষার সময় পার করছিলেন নজরুল ইসলাম ও ফাতিমা বেগম দম্পতি। তাঁরা শহরের নিউ টাউন এলাকার বাসিন্দা। এ দম্পতির গন্তব্য হবিগঞ্জের মাধবদী। নজরুল ইসলাম বললেন, ‘আর আধা ঘণ্টা দেখব। বাস না পেলে বাধ্য হয়ে অটোরিকশা নিয়ে মেয়ের জামাইবাড়ি যেতে হবে।’
ফাতিমা জানালেন, মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি দুই দিন ধরে। অবরোধের কারণে গতকাল যাননি। আবার যদি অবরোধ বাড়ানো হয়, তখন আরও সমস্যা। এই কারণে অবরোধের মধ্যেই রওনা দিতে হলো।

যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মহাসড়কে সক্রিয় আছেন বলে জানিয়েছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম।