মধ্যনগরে দুটি হাওরের বোরোখেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ, ফলন নিয়ে শঙ্কা

মধ্যনগর উপজেলায় দুটি হাওরে ব্রি–২৮ ধানখেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বড় ঘোড়াডোবা ও ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে বোরোখেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতে বোরো ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।

ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় এবার ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যনগর উপজেলার ছোট ঘোড়াডোবা ও বড় ঘোড়াডোবা হাওরে ৩৭৪ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ২৯, ৮৮, ৮৯ ও বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ওই দুই হাওরের ব্রি-২৮ ধানের খেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, প্রথমে ধানের পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির সাদা বা বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয়। পরে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ বেশি হলে ধানের রং রোদে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। ধানের ভেতরে চাল থাকে না। শিষের গোড়ায় কালো ও বাদামি হয়ে যায়।

মধ্যনগর ইউনিয়নের জমশেরপুর গ্রামের কৃষক পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ছোট ঘোড়াডোবা ও বড় ঘোড়াডোবা হাওরে তাঁর ৬৭২ শতাংশ জমি আছে। এর মধ্যে ৫৭৬ শতাংশ জমিতে ব্রি-২৮ ধান রোপণ করেছেন। ওই জমির ধানগাছে রোগ হয়ে আগুনের মতো পুড়ে যাচ্ছে। ধানের ভেতরে কোনো চাল নেই। কয়েক দিন আগেও সব ভালো ছিল। দু-তিন দিনে সব তছনছ হয়ে গেছে। তিনি এখনো কোনো ওষুধ দেননি। শুধু তাঁর নয়, আরও অনেকের জমির অবস্থা এমনই বলে তিনি জানান।

মধ্যনগর বাজারের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, বড় ঘোড়াডোবা হাওরে তাঁর ৩২০ শতাংশ জমি আছে। তিনি ব্রি-২৯ ধান আবাদ করেছেন। শিষ বের হতে শুরু করেছে। এ ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়নি। তবে ব্রি-২৮ খেতে আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে এবার ধানের ফলন কমে যেতে পারে। সরকারিভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

মধ্যনগর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কবীর হোসেন বলেন, ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে ১৫০ হেক্টর ও বড় ঘোড়াডোবা হাওরে ২২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যৎসামান্য খেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে পরিমাণ কতটুকু, তা তিনি জানাতে পারেননি।

ব্লাস্ট রোগের কারণে তামাটে হয়ে গেছে বোরো ধানখেত। মঙ্গলবার বিকেলে মধ্যনগরের ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, বোরো ধানের জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার, দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। সংক্রমণের শুরুতেই প্রতিষেধক দিলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অনেক কৃষক ব্লাস্ট দেখা দিলেও তাঁরা ‍গুরুত্ব দেন না। যখন কিছুই করার থাকে না, তখন হাহুতাশ শুরু করেন। এ অবস্থায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ধানের রোগবালাই ও পোকা দমন রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁরা কৃষকদের নিয়ে সভা করছেন। এমনকি কৃষকদের মধ্যে লিফলেটও বিতরণ করছেন। ব্লাস্ট রোগ নিয়ে এখনো উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই দুই হাওর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।