‘শরীর-মন সুস্থ রাখার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হলো দৌড়’

সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির উদ্যোগে জেলায় প্রথমবারের মতো হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকাল সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কেছবি: সংগৃহীত

‘স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। এরপর প্রতিবেশী এক দম্পতির উৎসাহে প্রথমে হাঁটা শুরু করি। এখন নিয়ম করে দৌড়াই। এতে আমার মানসিক সমস্যার সঙ্গে অনেক শারীরিক সমস্যাও কেটে গেছে। দৌড়ালে ওষুধ খেতে হয় না। শরীর-মন সুস্থ রাখার জন্য এটিই প্রাকৃতিক ওষুধ।’ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার বনানীর বাসিন্দা জেসমিন আক্তার। সুনামগঞ্জে আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে ২১ কিলোমিটার দৌড়ানোর পর এসব কথা বলেন তিনি।

জেসমিন আক্তারের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৩০০ দৌড়বিদ এই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭৪ বয়সী বৃদ্ধও ছিলেন।

সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির উদ্যোগে জেলায় প্রথমবারের মতো এই হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয় আজ শুক্রবার। সকাল পৌনে ছয়টায় পৌর শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে ম্যারাথন শুরু হয়। ১০ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার দুই ভাগে ভাগ হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রায় ৩০০ দৌড়বিদ (নারী-পুরুষ) এতে অংশ নেন। ম্যারাথন হয় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে।

ম্যারাথন চলাকালে নির্ধারিত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা দৌড়বিদদের জন্য পানি, স্যালাইন, হালকা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো নিচ্ছিলেন দৌড়ে অংশ নেওয়া লোকজন। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা এবং অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ছেলে রিয়ান আলম ও রায়হান আলমকে সঙ্গে নিয়ে ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন সিলেটের বাসিন্দা শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘সুস্থ থাকাটা জরুরি। পরিবারের সবাইকে নিয়েই হাঁটি, দৌড়াই। সিলেটের বিভিন্ন আয়োজনে ছেলেরা অংশ নেয়। তাদের আগ্রহে সুনামগঞ্জে এসেছি।’ রিয়ান, রাইয়ানও সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাসের কথা জানায়।

সুনামগঞ্জে আজ শুক্রবার সকালে হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। শহরের ঐতিহ্য জাদুঘরের পাশের সড়ক থেকে শুরু হয় এই ম্যারাথন
ছবি: প্রথম আলো

৬৯ বছর বয়সী সচীন্দ্র চন্দ্র অধিকারী ১০ কিলোমিটার দৌড়ে এসে অন্যদের সঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর সিলেট ফিটনেস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন। শুরু করেন দৌড়ানো। এখনো সুস্থ আছেন। সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের ১০ কিলোমিটারের দৌড়ে তিনি চতুর্থ হয়েছেন।

পাশে বসা সিলেট ফিটনেস ক্লাবের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৪০ জন সুনামগঞ্জ হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। সচীন্দ্র অধিকারী আমাদের প্রেরণা।’

সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির সদস্যসচিব আবু সালেহ সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অন্য জেলা থেকে আসা রানারদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এটিই প্রথম হাফ ম্যারাথনের আয়োজন। আমি নিজেও একজন রানার। এই হাফ ম্যারাথন আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সুনামগঞ্জ হাফ ম্যারাথনে ১০ কিলোমিটারের দৌড়ে প্রথম হয়েছেন দীপ তালুকদার, দ্বিতীয় আমির হোসেন ও তৃতীয় হন কাওসার আহমদ এবং ২১ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হন গোলাম রাহাত, দ্বিতীয় আশরাফুল আলম ও তৃতীয় ফাহিন্স আহমদ। ৪৫–ঊর্ধ্ব বয়সীদের ১০ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হন ওয়াহাব খান, দ্বিতীয় বিশ্বজিৎ দাশ, তৃতীয় হন জিয়া উদ্দিন। ম্যারাথনের শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ।