খাবার ও আবাসনসংকটের সমাধান চান শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি তোলাছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বিনতা চাকমা থাকেন নবাব ফয়জুন্নেসা হলে। হলের ডাইনিংয়ের খাবার নিয়ে তাঁর বিস্তর অভিযোগ। ঠান্ডা ভাত, পানসে ডাল কিংবা ভাজিতে তেল-চিটচিটে গন্ধ। আবার থাকতেও হয় গাদাগাদি করে। এই শিক্ষার্থী বললেন, হলের আশপাশে দোকান বা ক্যাফেটেরিয়াও নেই। ডাইনিংয়ের খাবারও মুখে দেওয়া যায় না। হল প্রশাসন এসবের স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি।

শুধু বিনতাই নন, এমন অভিযোগ শোনা যায় প্রায় প্রতিটি হলে। হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আবাসনসংকট আর খাবারের নিম্নমানের সমস্যা তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। তাই চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা এ দুটি সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবেন—এমনটাই প্রত্যাশা।

১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। এবার হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ভোটার ২৭ হাজার ৫২১ জন। গত এক সপ্তাহে আবাসিক হলের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রার্থীদের কাছে তাঁরা দুই সংকট নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ চান।

আবাসনসংকট ও নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন হল নির্মাণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর খাবার ব্যবস্থাপনার তদারক করতে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হলে গাদাগাদির জীবন

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় ২৮ হাজার। অথচ ১৪টি হলে আসন মাত্র ৬ হাজার ৩৬৯। বাস্তবে গাদাগাদি করে থাকছেন ৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। এর বাইরে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে থাকেন ক্যাম্পাসসংলগ্ন মেসে বা দূরের শহরে।

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের শিক্ষার্থী পরেশ চাকমা বললেন, ‘আমাদের হল নতুন হলেও এখন দ্বৈত আসন দেওয়া হচ্ছে; অর্থাৎ এক আসনে দুজন থাকছেন। শুরুতে খাবারের মান মোটামুটি ভালো ছিল। এখন খারাপ হচ্ছে। অন্য হলের তুলনায় দামও বেশি। যাঁরা হল সংসদে নির্বাচিত হবেন, তাঁরা এ বিষয়ে কাজ করবেন বলে আমরা আশা করি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের একটি হল। সম্প্রতি তোলা।
ছবি: সৌরভ দাশ

মেয়েদের হলে সংকট আরও প্রকট। নিরাপত্তার কারণে সবাই হলে থাকতে চান, কিন্তু পর্যাপ্ত আসন নেই। বিজয় ২৪ হলের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বললেন, ‘আসন বরাদ্দ ঠিকমতো হয় না। ডাইনিংয়ের পরিবেশও খারাপ। আগের দিনের খাবার দেওয়া হয়। দামও বেশি। নির্বাচিত নেতারা যেন নিয়মিত তদারক করেন, এটাই চাই।’

শিক্ষার্থীরা বহুবার এসব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করেছেন। গত ১৭ আগস্ট তাঁরা শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন। সে সময় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার ভবনের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন।

মোটা চাল, ছোট মাছ-মাংসের টুকরাই ভরসা

আবাসনের মতো খাবারের মান নিয়েও ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের। অনেক হলে আগের দিনের খাবার গরম করে পরিবেশন করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রান্নাঘরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, মোটা চাল, ছোট মাছ আর মাংসের টুকরা—এসবই শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবার।

শাহজালাল হলের শিক্ষার্থী তানজিফ হাসান বললেন, ‘ডাইনিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ। পোকামাকড়, সাপ ঢুকে পড়ে। মেঝে পিচ্ছিল থাকে। পড়াশোনার পরিবেশ তো নেই-ই, জীবনযাপনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।’

এ এফ রহমান হলের মুহতাসিম মাহমুদ এসব নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ। তিনি বললেন, ‘খাবারের মান এত খারাপ যে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। পেটের সমস্যা হয়েছে কয়েকবার। নির্বাচিত প্রার্থীরা যদি তদারক না করেন, সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতবারই প্রশাসনকে জানিয়েছেন, ততবারই আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো উন্নতি হয়নি। এবার তাঁরা আশা করছেন, নির্বাচিত চাকসু ও হল সংসদ নেতারা এসব সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেবেন। এমনকি তাঁদের ইশতেহারেও রাখবেন।

নির্বাচনে লড়তে প্রতিটি হলেই প্রার্থী হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের প্রচারণায় হলের নানা সংকট জায়গা পাচ্ছে। প্রার্থীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আবাসনসংকট ও নিম্নমানের খাবারের বিষয়টি তাঁদের কথায় গুরুত্ব পাচ্ছে। আলাওল হলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. রাকিবুল বশর প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে দুই সমস্যার কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবেন।

অন্যদিকে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের ভিপি প্রার্থী পারমিতা চাকমা বলেন, হলে থাকতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে কাজ করবেন। হল প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবেন।