শুক্রবারই মায়ের কাছে এলেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে

গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স আজ বিকেল সোয়া ছয়টায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও এলাকাবাসী শেষ বারের মতো দেখতে ভিড় করেনছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মা সাহাবিয়া খাতুন দীর্ঘদিন চোখের সমস্যায় ভুগছেন। মায়ের চিকিৎসা করাতে গাজীপুর নিতে আজ শুক্রবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। আসাদুজ্জামান আজ ঠিকই বাড়িতে ফিরেছেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় আসাদুজ্জামানের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

নিহত আসাদুজ্জামানের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। ছেলের লাশ বাড়ির সামনে স্কুলের মাঠে পৌঁছানোর পর বিলাপ করতে করতে মা সাহাবিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বুকের ধন আইজ আমারে নেওনের লাইগ্যা আইব কইছিল। আমার চোক্কের চিকিৎসা করানির লাইগ্গা গাজীপুর লইয়া যাইব কইছিল। কিন্তু আমার বুকের ধনরে ওরা কাইড়া নিল। আমার বাড়িত আইজ লাশ আইল পুতের।’ কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে মূর্ছা যান এই মা।

আসাদুজ্জামানের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে পৌঁছানের পর মরদেহ বাড়ির পাশের ফুলবাড়িয়া ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসী ভিড় করেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে। তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। বাদ মাগরিব বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা, সাংবাদিকসহ গ্রামের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সবাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। কাল শনিবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধনের আহ্বান করা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আসাদুজ্জামানের লাশের সঙ্গে ফুলবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে আসেন তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম। সঙ্গে ছিল দুই ছেলে তৌকির হোসেন (৭) ও ফাহিম হোসেন (৩)। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাড়ির একটি ঘরে দুই শিশুকে খাটে খেলতে দেখা যায়। পাশের চৌকিতে বসে আহাজারি করছিলেন মুক্তা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার দুই সন্তানকে এতিম করে দিল। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

আরও পড়ুন

নিহত আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজে গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগমুহূর্তের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, আসাদুজ্জামান স্থানীয় আল-হেরা একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেসন্তানকে নিয়ে থাকতেন। গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একটি ক্লিনিক ব‍্যবসায় জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের স্ত্রী মুক্তা বেগম তাঁর স্বামী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আসাদুজ্জামানের বড় ভাই সেলিম হোসেন গাজীপুরের বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সেলিম হোসেন বলেন, ‘আজ মায়ের চোখের চিকিৎসা করাতে মাকে নিতে আসার কথা ছিল ভাইয়ের। গতকাল আসরের পরেও এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর ফোন পেয়ে ছুটে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই। আমি ভাই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

আরও পড়ুন